গাছের কাষ্ঠল টিস্যুর গভীরে বসবাসকারী কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়া বন বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সম্প্রতি, ইয়েল স্কুল অফ এনভায়রনমেন্টের বিজ্ঞানীরা এক যুগান্তকারী গবেষণায় এই তথ্য উন্মোচন করেছেন, যা গাছের অভ্যন্তরীণ অণুজীব জগৎ সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে। এই গবেষণাটি ২৫শে আগস্ট, ২০২৫ তারিখে নেচার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং এটি গাছের শারীরস্থান ও বন বাস্তুবিদ্যা বোঝার ক্ষেত্রে এক নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। গবেষণা অনুসারে, প্রতিটি গাছে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া বাস করে। এই অণুজীবগুলি গাছের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া, যেমন কার্বন চক্র এবং পুষ্টি বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
বিজ্ঞানীরা উত্তর-পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬টি প্রজাতির মোট ১৫০টি জীবিত গাছ পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, অণুজীবগুলি গাছের দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত থাকে: হার্টউড (অভ্যন্তরীণ কাঠ) এবং স্যাপউড (বাহ্যিক কাঠ)। হার্টউডে অক্সিজেন-বিহীন পরিবেশে বসবাসকারী অ্যানেরোবিক অণুজীব এবং স্যাপউডে অক্সিজেন-প্রয়োজনীয় অ্যারোবিক অণুজীবের আধিক্য দেখা যায়। এই অণুজীবগুলি সক্রিয়ভাবে গ্যাস উৎপাদন এবং পুষ্টি চক্রের মাধ্যমে গাছের জীবনধারণে সহায়তা করে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, গাছের প্রজাতিভেদে অণুজীব সম্প্রদায়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সুগার ম্যাপেল গাছের অণুজীব সম্প্রদায় পাইন গাছের থেকে ভিন্ন। এই পর্যবেক্ষণটি ইঙ্গিত দেয় যে, গাছের প্রজাতি এবং তাদের অভ্যন্তরীণ অণুজীব সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি সহ-বিবর্তনীয় সম্পর্ক থাকতে পারে। এই আবিষ্কারটি বন বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রজাতির নির্দিষ্ট অণুজীব মিথস্ক্রিয়া অধ্যয়নের গুরুত্বকে তুলে ধরে। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্ক ব্র্যাডফোর্ড এবং পিটার রেমন্ডের মতো বিজ্ঞানীরা এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। প্রধান গবেষক জোনাথন গেভির্টজম্যান বলেছেন, “বিশ্বের গাছগুলিতে অগণিত অণুজীব প্রজাতি বাস করে যা আমরা এখনও নথিভুক্ত করিনি। এই বিশাল জীববৈচিত্র্যের ভান্ডারকে বোঝা অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে যখন জলবায়ু পরিবর্তন এই সম্প্রদায়গুলিকে প্রভাবিত করতে পারে। কিছু অণুজীব গাছের বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা মূল্যবান যৌগ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সমাধান দিতে পারে।” এই গবেষণাটি গাছের অভ্যন্তরীণ অণুজীব সম্প্রদায়ের জটিল সম্পর্ককে আলোকিত করেছে এবং বন বাস্তুতন্ত্রে তাদের কার্যকারিতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাদের সম্ভাব্য ভূমিকা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও প্রসারিত করেছে। ভবিষ্যতে বিশ্বজুড়ে কাঠের অণুজীবের উপর আরও গবেষণা প্রয়োজন, যাতে তাদের বৈচিত্র্য এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যায়।