ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (Caltech)-এর গবেষকরা ডিএনএ (DNA) ব্যবহার করে এক যুগান্তকারী নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন যা উদাহরণ থেকে শিখতে সক্ষম। এই আণবিক কম্পিউটিং পদ্ধতিটি রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করে, যা জৈবিক সিস্টেমের শেখার প্রক্রিয়ার অনুরূপ। এই গবেষণাটি আণবিক কম্পিউটিং-এর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা ভবিষ্যতে আরও জটিল শেখার আচরণ প্রদর্শনের সম্ভাবনা উন্মোচন করেছে।
প্রফেসর লুলু কিয়ান, যিনি বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিং-এর একজন বিশেষজ্ঞ, এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাদের এই যুগান্তকারী কাজটি "সুপারভাইজড লার্নিং ইন ডিএনএ নিউরাল নেটওয়ার্কস" শিরোনামে Nature জার্নালে ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত হয়েছে। এই ডিএনএ-ভিত্তিক নিউরাল নেটওয়ার্কটি হাতে লেখা সংখ্যা শনাক্ত করার জন্য প্রশিক্ষিত হয়েছিল, যা প্রচলিত কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্কগুলির জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। এই সিস্টেমে প্রতিটি সংখ্যাকে ডিএনএ স্ট্র্যান্ডের একটি অনন্য প্যাটার্ন হিসেবে এনকোড করা হয়। নির্দিষ্ট রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে এই প্যাটার্নগুলি একটি ফ্লুরোসেন্ট সংকেত তৈরি করে, যা শনাক্তকৃত সংখ্যাটিকে নির্দেশ করে। এই পদ্ধতিটি ডিএনএ কম্পিউটিং-এর মাধ্যমে জটিল প্যাটার্ন শনাক্তকরণের সম্ভাবনাকে শক্তিশালীভাবে প্রদর্শন করে।
এই ডিএনএ-ভিত্তিক নিউরাল নেটওয়ার্কের উদাহরণ থেকে শেখার ক্ষমতা অভিযোজিত এবং শক্তি-সাশ্রয়ী আণবিক কম্পিউটিং সিস্টেমের বিকাশের নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। এই ধরনের সিস্টেমগুলি চিকিৎসাবিজ্ঞান, যেমন রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিরুদ্ধে রিয়েল-টাইমে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে এমন "স্মার্ট" ওষুধ তৈরি, অথবা বাহ্যিক অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এমন "স্মার্ট" উপকরণ তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে।
এই গবেষণাটি প্রফেসর কিয়ান এবং তার দলের পূর্ববর্তী কাজের উপর ভিত্তি করে তৈরি, যারা ডিএনএ কম্পিউটিং-এর ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের ২০১৮ সালের একটি গবেষণায়, তারা হাতে লেখা সংখ্যা শনাক্ত করতে সক্ষম একটি ডিএনএ-ভিত্তিক নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন, যা জটিল কাজের জন্য ডিএনএ কম্পিউটিং-এর সম্ভাবনাকে আরও একবার প্রমাণ করেছিল। ডিএনএ কম্পিউটিং-এর এই অগ্রগতি আণবিক কম্পিউটিং-এর ক্রমবর্ধমান আগ্রহ এবং সম্ভাবনাকে তুলে ধরে। এই ক্ষেত্রে গবেষণা যত অগ্রসর হবে, এই সিস্টেমগুলি আরও পরিশীলিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত ডোমেনে উদ্ভাবনী প্রয়োগের পথ প্রশস্ত করবে। এই প্রযুক্তি কেবল কম্পিউটিং-এর ভবিষ্যৎকেই নতুন আকার দেবে না, বরং এটি জীবন বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের বিভিন্ন শাখায় নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করবে।