বহু দশক ধরে প্রচলিত বৈজ্ঞানিক ধারণা ছিল যে, ডিএনএ (DNA) অণু চাপের মুখে পড়লে জট পাকিয়ে যায় এবং বিশৃঙ্খল আকার ধারণ করে। তবে, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণা এই ধারণাকে আমূল বদলে দিয়েছে। এই গবেষণায় দেখা গেছে যে, চাপের মধ্যে ডিএনএ আসলে সুশৃঙ্খলভাবে স্প্রিং বা পেঁচানো কাঠামোর মতো আকার ধারণ করে, যা প্লেকটোনেমা (plectonema) নামে পরিচিত। এই আবিষ্কার জেনেটিক উপাদানের কার্যকারিতা সম্পর্কে দীর্ঘদিনের বিশ্বাসকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে।
এই যুগান্তকারী গবেষণাটি সম্ভব হয়েছে ন্যানোপোর (nanopore) নামক ক্ষুদ্র ছিদ্র ব্যবহার করে পরিচালিত পরীক্ষার মাধ্যমে। গবেষকরা ডিএনএ-কে একটি ক্ষারীয় লবণাক্ত দ্রবণে রেখে ভোল্টেজ এবং তরল প্রবাহের মাধ্যমে এটিকে ন্যানোপোরের মধ্যে দিয়ে চালিত করেন। এই শক্তি ডিএনএ অণুকে ঘোরাতে বাধ্য করে, যা অণুতে টর্ক (torque) তৈরি করে। পূর্ববর্তী পরীক্ষাগুলোতে, যখন ডিএনএ ন্যানোপোরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল, তখন যে অনিয়মিত কারেন্ট সংকেত দেখা যেত, সেটিকে ডিএনএ-র জট পাকিয়ে যাওয়া হিসেবে ব্যাখ্যা করা হতো।
কিন্তু আরও বিস্তারিত বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, এই গঠনগুলো আসলে কোনো জট ছিল না। বরং, ডিএনএ নিজেকে প্লেকটোনেমা নামক সুশৃঙ্খল, পেঁচানো সর্পিল আকারে গুটিয়ে নিচ্ছিল। এই আবিষ্কার ডিএনএ-র গতিবিদ্যা এবং চাপের মধ্যে এর আচরণ বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। এটি আণবিক জেনেটিক্স এবং জৈবপ্রযুক্তিবিদ্যার মতো ক্ষেত্রগুলোতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।
এই গবেষণা ডিএনএ-র স্থিতিস্থাপকতা এবং চাপের মুখে এর অভিযোজন ক্ষমতা সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে প্রসারিত করেছে। এটি কেবল একটি বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিই নয়, বরং প্রকৃতির সূক্ষ্ম কার্যাবলী বোঝার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যেখানে বিশৃঙ্খলা নয়, বরং এক অন্তর্নিহিত শৃঙ্খলা বিদ্যমান। ডিএনএ-র এই স্প্রিং-এর মতো গঠন কোষের মধ্যে এর কার্যকারিতা এবং তথ্য সংরক্ষণে কীভাবে ভূমিকা রাখে, তা নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। এই আবিষ্কার ডিএনএ-র গঠন এবং কার্যকারিতা নিয়ে আমাদের বোঝাপড়াকে আরও গভীর করবে বলে আশা করা যায়।