পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় মহাকাশ বর্জ্য উদ্ধার: তদন্ত চলছে

সম্পাদনা করেছেন: gaya ❤️ one

অস্ট্রেলিয়ার দূরবর্তী পশ্চিম অংশে, বিশেষত পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পিলবারা অঞ্চলের নিউম্যান শহর থেকে প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার পূর্বে, একটি অপ্রত্যাশিত বস্তু আবিষ্কৃত হয়েছে যা মহাকাশ বর্জ্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২৫ সালের ১৮ই অক্টোবর, যখন স্থানীয় খনি শ্রমিকেরা প্রায় দুপুর ২টোর দিকে একটি জ্বলন্ত বস্তু দেখতে পান এবং সঙ্গে সঙ্গে জরুরি পরিষেবাগুলিকে সতর্ক করেন। এই আবিষ্কারটি কেবল একটি আঞ্চলিক ঘটনা নয়, বরং এটি মহাকাশ কার্যকলাপের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে আমাদের অবস্থানের একটি প্রতিফলন, যা পৃথিবীর উপর আমাদের নির্ভরশীলতার গভীরতা স্মরণ করিয়ে দেয়।

প্রাথমিক নিরীক্ষায় প্রতীয়মান হয়েছে যে উদ্ধারকৃত বস্তুটি কার্বন ফাইবার দ্বারা নির্মিত এবং এটি একটি কম্পোজিট-ওভারর‍্যাপড প্রেশার ভেসেল বা রকেট ট্যাঙ্ক হতে পারে। এই ধরনের উপাদান মহাকাশযানের কাঠামোতে ব্যবহৃত হয়। অস্ট্রেলিয়ান পরিবহন নিরাপত্তা ব্যুরো (ATSB) নিশ্চিত করেছে যে বস্তুটি কোনো বাণিজ্যিক বিমান থেকে আসেনি, যা এর বহির্জাগতিক উৎসকে আরও দৃঢ় করে। ফ্লিন্ডার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক অ্যালিস গোরম্যান, যিনি মহাকাশ প্রত্নতত্ত্বের একজন অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব, ধারণা করেছেন যে এটি সম্ভবত গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে উৎক্ষেপণ করা একটি চীনা জিয়েলং (Jielong) রকেটের চতুর্থ পর্যায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, সেপ্টেম্বরের ২৩ তারিখে একটি জিয়েলং-৩ রকেট চীনের ওরিয়েন্টাল স্পেসপোর্ট লঞ্চ শিপ প্ল্যাটফর্ম থেকে উৎক্ষেপিত হয়েছিল, যা এই সম্ভাবনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

অধ্যাপক গোরম্যান উল্লেখ করেছেন যে যদি বস্তুটি ২৫ তারিখের উৎক্ষেপণের অংশ হয়, তবে এটি পৃথিবীতে ফিরে আসার আগে কিছু সময় ধরে কক্ষপথে ছিল, এবং এর আকস্মিক প্রত্যাবর্তন অপ্রত্যাশিত ছিল, কারণ এর পুনঃপ্রবেশের কোনো পূর্বাভাস পাওয়া যায়নি। এই দ্রুত সাড়াদান এবং স্থানীয় কর্মীদের সতর্কতা প্রমাণ করে যে প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য সুপ্রতিষ্ঠিত প্রক্রিয়া বিদ্যমান। অস্ট্রেলিয়ান স্পেস এজেন্সি (ASA), ATSB, এবং স্থানীয় জরুরি পরিষেবাগুলির সমন্বিত পদক্ষেপ এই পরিস্থিতির গুরুত্বকে তুলে ধরে।

অস্ট্রেলিয়ান সরকার মহাকাশ বর্জ্য পুনঃপ্রবেশ সংক্রান্ত ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য 'অস্ট্রেলিয়ান গভর্নমেন্ট স্পেস রি-এন্ট্রি ডেব্রি প্ল্যান' (AUSSPREDPLAN) কার্যকর রেখেছে, যা এই ধরনের ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কাঠামো প্রদান করে। এই পরিকল্পনা জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পূরণেও সহায়ক। এর আগে, জুলাই ২০২৩ সালে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার গ্রিন হেডের কাছে ভারতীয় পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকলের বর্জ্য ভেসে এসেছিল, যা প্রমাণ করে যে অস্ট্রেলিয়া এই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে। বর্তমানে, কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে জনসাধারণের নিরাপত্তার জন্য কোনো তাৎক্ষণিক বিপদ নেই, তবে তদন্ত প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

উৎসসমূহ

  • Yahoo!7 News

  • ABC News

  • Moneycontrol

  • 7NEWS

  • Australian Space Agency

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।