নাসার পারসিভারেন্স রোভার মঙ্গলের জেজেরো ক্রেটারে অবস্থিত ব্রাইট অ্যাঞ্জেল ফর্মেশন থেকে একটি নমুনা সংগ্রহ করেছে, যা কোটি কোটি বছর আগে একটি হ্রদ ছিল বলে মনে করা হয়। এই স্যাফায়ার ক্যানিয়ন নমুনাটিতে ভাইভিয়ানাইট এবং গ্রেইগাইটের মতো খনিজ পদার্থ পাওয়া গেছে, যা পৃথিবীতে প্রায়শই অণুজীব কার্যকলাপের সাথে যুক্ত থাকে। এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে ঘোষণা করা হয়েছিল।
স্টোনি ব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহ বিজ্ঞানী জোয়েল হুরোভিটজ এই বিশ্লেষণের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন যে এই খনিজগুলি জৈব পদার্থের সাথে মিথস্ক্রিয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে, যা জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘটে থাকতে পারে। তবে, তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে অজৈবিক রাসায়নিক বিক্রিয়াও একই ধরনের বৈশিষ্ট্য তৈরি করতে পারে এবং বর্তমান রোভারের ডেটা জীবনের উপস্থিতি নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করতে পারে না।
মঙ্গল গ্রহের প্রাচীন জীবনের সন্ধান করাই পারসিভারেন্স রোভারের মূল লক্ষ্য, যা ২০২১ সাল থেকে মঙ্গলের বুকে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। এই আবিষ্কারটিকে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে, বিশেষ করে নমুনাটি পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হলে, এর উৎস নির্ধারণে সহায়ক হতে পারে।
পারসিভারেন্স রোভার দ্বারা সংগৃহীত ৩০টি নমুনার মধ্যে স্যাফায়ার ক্যানিয়ন একটি। তবে, মঙ্গল গ্রহের নমুনা ফিরিয়ে আনার মিশনে ক্রমবর্ধমান খরচ এবং লজিস্টিক চ্যালেঞ্জের কারণে এর সময়সীমা ২০৪০-এর দশক পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই আবিষ্কারটি মঙ্গল গ্রহে একসময় জীবনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ছিল এমন ক্রমবর্ধমান প্রমাণের অংশ। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে আরও বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে, তবে এই ফলাফলগুলি বহির্জাগতিক জীবনের সন্ধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
পারসিভারেন্স মিশন মঙ্গলের ইতিহাস সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করে চলেছে এবং অতীতের জীবনের নিশ্চিত প্রমাণের আশা জাগাচ্ছে। গবেষকরা ব্রাইট অ্যাঞ্জেল ফর্মেশনের পলল শিলাগুলির উপর একটি বিস্তারিত ভূতাত্ত্বিক, পেট্রোগ্রাফিক এবং ভূ-রাসায়নিক সমীক্ষা চালিয়েছেন। এই শিলাগুলিতে জৈব কার্বন, সালফার, ফসফরাস এবং জারিত লোহা (মরিচা) রয়েছে, যা অণুজীবের জন্য শক্তির একটি সমৃদ্ধ উৎস হতে পারত। এই খনিজগুলির উপস্থিতি এবং তাদের বিন্যাস ইঙ্গিত দেয় যে এগুলি সম্ভবত আয়রন এবং সালফারের রেডক্স সাইক্লিংয়ের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে, যা পৃথিবীতে প্রায়শই অণুজীবের বিপাকীয় ক্রিয়াকলাপের সাথে যুক্ত থাকে। যদিও এই প্রমাণগুলি জীবনের চূড়ান্ত নিশ্চিতকরণ নয়, তবে এগুলি সম্ভাব্য বায়োসিগনেচার হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে, যা আরও অনুসন্ধানের দাবি রাখে।