মহাকাশচারীরা 'দুর্ঘটনা' নামে পরিচিত একটি বাদামী বামনের বায়ুমণ্ডলে সাইলেন (SiH4) নামক একটি রাসায়নিক যৌগের উপস্থিতি সনাক্ত করেছেন, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানের জগতে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। পৃথিবী থেকে প্রায় ৫০ আলোকবর্ষ দূরে লিবারা নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত এই সাবস্টেলার বস্তুটি, তার বায়ুমণ্ডলে এই যৌগটির উপস্থিতি নিশ্চিত করার মাধ্যমে, এই রহস্যময় মহাজাগতিক বস্তুগুলির রাসায়নিক গঠন সম্পর্কে নতুন ধারণা দিয়েছে। এটি বাদামী বামনের বায়ুমণ্ডলে সাইলেন-এর প্রথম সনাক্তকরণ।
'দুর্ঘটনা', যার আনুষ্ঠানিক নাম WISEA J153429.75-104303.3, প্রথম নজরে আসে ২০২০ সালে, যখন ড্যান ক্যাজেলডেন নামক একজন নাগরিক বিজ্ঞানী 'ব্যাকইয়ার্ড ওয়ার্ল্ডস জুনোভার্স প্রজেক্ট'-এর মাধ্যমে এটিকে শনাক্ত করেন। এর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, যেমন উচ্চ গতি এবং ইনফ্রারেড বর্ণালীতে বিশেষ রঙ, এটিকে আরও গবেষণার জন্য আকর্ষণীয় করে তোলে। পরবর্তী পর্যবেক্ষণগুলি এটিকে Y-টাইপ বাদামী বামন হিসাবে নিশ্চিত করে, যা বাদামী বামনদের মধ্যে শীতলতম শ্রেণী, যার তাপমাত্রা ১,৩০০ কেলভিনের নিচে।
এই আবিষ্কারটি তাৎপর্যপূর্ণ কারণ পূর্বে কোনো বাদামী বামনের বায়ুমণ্ডলে সাইলেন সনাক্ত করা যায়নি। এই যৌগটি সাধারণত অক্সিজেন-কম পরিবেশে পাওয়া যায়, যা ইঙ্গিত দেয় যে 'দুর্ঘটনা' সম্ভবত এই ধরনের পরিস্থিতিতে গঠিত হয়েছিল। সাইলেন-এর উপস্থিতি বাদামী বামনদের বায়ুমণ্ডলে ঘটে যাওয়া রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলি সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করে এবং তাদের গঠন ও বিবর্তন মডেলগুলিকে উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST) দ্বারা সম্পাদিত উন্নত ইনফ্রারেড পর্যবেক্ষণের ফলেই এই আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে।
এই গবেষণা কেবল বাদামী বামনদের সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়াকেই উন্নত করে না, বরং এক্সোপ্ল্যানেটারি বায়ুমণ্ডলের অধ্যয়নের ক্ষেত্রেও বৃহত্তর প্রভাব ফেলে। এটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের আবিষ্কারে নাগরিক বিজ্ঞানের গুরুত্বকেও তুলে ধরে। সাইলেন-এর উপস্থিতি এই ধারণাকে সমর্থন করে যে, অত্যন্ত প্রাচীন এবং কম ধাতবতার (low-metallicity) পরিবেশে সিলিকন হাইড্রোজেনের সাথে যুক্ত হয়ে সাইলেন-এর মতো হালকা অণু তৈরি করতে পারে, যা বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে পৌঁছাতে সক্ষম। এর বিপরীতে, আমাদের সৌরজগতের সাম্প্রতিককালে গঠিত বস্তুগুলিতে, যেমন বৃহস্পতি এবং শনি, সিলিকন সহজলভ্য অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে ভারী অণু তৈরি করে যা বায়ুমণ্ডলের গভীরে তলিয়ে যায় এবং টেলিস্কোপ দ্বারা সনাক্ত করা যায় না। এই ভিন্ন রাসায়নিক পথ বস্তুর বয়স এবং গঠনের ইতিহাসের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বায়ুমণ্ডলীয় রসায়নের মৌলিক পার্থক্যগুলিকে তুলে ধরে।
এই আবিষ্কারটি গ্রহ গঠন এবং বায়ুমণ্ডলীয় বিবর্তন নিয়ে গবেষণার নতুন দিক উন্মোচন করেছে। এটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নাগরিক বিজ্ঞানীদের অবদানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, কারণ 'দুর্ঘটনা' বস্তুটি একজন নাগরিক বিজ্ঞানী দ্বারাই প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল।