মহাকাশের সুদূর প্রান্ত থেকে আগত এক মহাজাগতিক অতিথি, আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূমকেতু 3I/ATLAS, সম্প্রতি স্পেনের বার্গুইলোসের আকাশে অপেশাদার জ্যোতির্বিদ এডগার মার্টিন-ব্লাস এবং আসিয়ার আরানজ-এর ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। এটি আমাদের সৌরজগতে আবিষ্কৃত তৃতীয় আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তু। প্রায় ৬১ কিমি/সেকেন্ড বেগে ভ্রমণকারী এই ধূমকেতুটি প্রথমবার শনাক্ত হয়েছিল ২০২৫ সালের ১লা জুলাই, চিলির ATLAS সিস্টেমে।
এই মহাজাগতিক বস্তুর নিউক্লিয়াসের আনুমানিক ব্যাস ০.৩২ থেকে ৫.৬ কিলোমিটারের মধ্যে। এটি ২০২৫ সালের ২৯শে অক্টোবর সূর্যের সবচেয়ে কাছে আসবে, যা 'পেরিহেলিওন' নামে পরিচিত, এবং সেই সময় পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব হবে ১.৩৬ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট। যদিও এর সর্বোচ্চ উজ্জ্বলতা অক্টোবরে প্রত্যাশিত, তবে সেপ্টেম্বর মাস থেকেই এটি রাতের আকাশে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।
ভার্চুয়াল ভয়েজার্স-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর এডগার মার্টিন-ব্লাস তাঁর বাড়ির টেলিস্কোপ ব্যবহার করে ধূমকেতুটির বিশদ চিত্র ধারণ করেছেন। এনভিডিয়া-তে কর্মরত আসিয়ার আরানজ তাঁর সাথে যোগ দিয়েছিলেন, এবং তাঁরা একটি Skywatcher 200/1000mm টেলিস্কোপ, একটি ZWO 1600MM কুলড ক্যামেরা এবং একটি HEQ5 ইকুয়েটোরিয়াল মাউন্ট ব্যবহার করে ধূমকেতুটির গতিপথ পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাঁদের এই পর্যবেক্ষণগুলি জ্যোতির্বিদ্যা সম্প্রদায়ের জন্য লাইভ-স্ট্রিম করা হয়েছে এবং ভিডিও আকারে সম্পাদনা করা হয়েছে।
এডগার মার্টিন-ব্লাস অক্টোবরে ধূমকেতুটির CO2 লেজ ধারণ করার জন্য পূর্ণাঙ্গ রাতের পর্যবেক্ষণ চালানোর পরিকল্পনা করছেন। তিনি বার্গুইলোসের আকাশের গুণমান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও, নতুন রাস্তার আলো থেকে সৃষ্ট আলোক দূষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যা জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণে বাধা সৃষ্টি করে। আলোক দূষণ কেবল পেশাদার জ্যোতির্বিদদের জন্যই নয়, অপেশাদার জ্যোতির্বিদদের জন্যও একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা মহাকাশের এই বিস্ময়কর দৃশ্যগুলি ধারণ করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
উল্লেখ্য, 3I/ATLAS-এর মতো আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তুগুলি আমাদের সৌরজগতের বাইরে থেকে আসে এবং এদের গতিপথ ও গঠন সম্পর্কে গবেষণা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধূমকেতুটি প্রায় ৭ বিলিয়ন বছর পুরানো হতে পারে, যা আমাদের সৌরজগতের চেয়েও প্রাচীন। এর রাসায়নিক গঠন, বিশেষ করে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) এবং জলের (H2O) অনুপাত, এর রহস্যময় উৎস সম্পর্কে আলোকপাত করতে পারে।
এই বিরল মহাজাগতিক অতিথিকে নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন টেলিস্কোপের মাধ্যমে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, কারণ এটি একবার সৌরজগৎ ত্যাগ করলে আর ফিরে আসবে না।