মহাকাশে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST) প্রায় ৩,৪০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত স্করপিওস নক্ষত্রমণ্ডলীর প্রজাপতি নীহারিকা (NGC 6302) এর এক অভূতপূর্ব চিত্র উন্মোচন করেছে। এই নীহারিকাটি একটি মৃতপ্রায় নক্ষত্রের শেষ পর্যায়কে প্রতিনিধিত্ব করে, যা নাক্ষত্রিক বিবর্তন এবং গ্রহ ব্যবস্থার গঠন সম্পর্কে অমূল্য অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।
ওয়েবের মিড-ইনফ্রারেড ইন্সট্রুমেন্ট (MIRI) ব্যবহার করে, টেলিস্কোপটি নীহারিকার কেন্দ্রীয় অঞ্চলের চারপাশের ঘন ধূলিকণা ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে, পূর্বে অস্পষ্ট থাকা কেন্দ্রীয় নক্ষত্রটির সরাসরি পর্যবেক্ষণ সম্ভব হয়েছে, যা ২,২০,০০০ কেলভিনেরও বেশি তাপমাত্রার একটি শ্বেত বামন। এই নক্ষত্রটি আমাদের গ্যালাক্সির অন্যতম উষ্ণতম কেন্দ্রীয় নক্ষত্র হিসেবে পরিচিত। ওয়েবের পর্যবেক্ষণগুলি একটি ধূলিকণার তৈরি ডোনাট-আকৃতির টোরাসও উন্মোচন করেছে, যা কোয়ার্টজের মতো স্ফটিকাকার সিলিকেট দিয়ে গঠিত। এই গঠনটি নীহারিকার স্বতন্ত্র প্রজাপতি-সদৃশ চেহারা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ধূলিকণার কণাগুলি প্রায় এক মিলিয়নতম মিটার আকারের, যা মহাজাগতিক ধূলিকণার জন্য বেশ বড় এবং দীর্ঘ সময় ধরে এদের বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
পর্যবেক্ষণে প্রায় ২০০টি বর্ণালী রেখা সনাক্ত করা হয়েছে, যা নীহারিকার মধ্যে নির্দিষ্ট পরমাণু এবং অণুর উপস্থিতি নির্দেশ করে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো পলিঅ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন (PAHs) এর উপস্থিতি। পৃথিবীতে এগুলি ধোঁয়া বা পোড়া টোস্টের মতো বস্তুতে পাওয়া যায়। মহাকাশে এদের উপস্থিতি, বিশেষ করে একটি অক্সিজেন-সমৃদ্ধ নীহারিকায়, রাসায়নিক প্রক্রিয়ার এক নতুন দিক উন্মোচন করেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই PAH গুলি কেন্দ্রীয় নক্ষত্রের বায়ুপ্রবাহ যখন পার্শ্ববর্তী গ্যাসের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তখন গঠিত হয়। এটি PAH গঠনের প্রথম প্রমাণ হতে পারে যা একটি অক্সিজেন-সমৃদ্ধ গ্রহ নীহারিকায় ঘটছে।
এই আবিষ্কারগুলি নক্ষত্রের জীবনচক্র এবং মহাকাশে জটিল অণু সংশ্লেষণ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। এটি আমাদের গ্রহ ব্যবস্থার উৎপত্তি এবং জীবনের মৌলিক উপাদানগুলি কীভাবে তৈরি হয় সে সম্পর্কে গভীর ধারণা দেয়। ওয়েবের চলমান এবং ভবিষ্যৎ পর্যবেক্ষণগুলি নাক্ষত্রিক মৃত্যুর প্রক্রিয়া এবং মহাজাগতিক বস্তুর সমৃদ্ধি সম্পর্কে আরও তথ্য উদ্ঘাটন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রজাপতি নীহারিকার মতো বস্তুগুলির অধ্যয়ন মহাজাগতিক ধূলিকণা গঠন এবং নতুন নক্ষত্র ও গ্রহের উৎপত্তিতে এর ভূমিকা সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়াকে আরও উন্নত করবে।