অপ্রত্যাশিত মহাজাগতিক অতিথি: পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে গেল গ্রহাণু, নজরদারির সীমাবদ্ধতা উন্মোচিত
সম্পাদনা করেছেন: gaya ❤️ one
২০২৫ সালের ১লা অক্টোবর, মহাকাশ পর্যবেক্ষণের বর্তমান সীমাবদ্ধতাগুলি স্পষ্ট করে দিয়ে একটি বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। গ্রহাণু '২০২৫ টিএফ' পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৪০০ কিলোমিটার দূর দিয়ে অতিক্রম করে, যা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের কক্ষপথের দূরত্বের প্রায় সমতুল্য। এই ক্ষুদ্র মহাজাগতিক বস্তুটি পৃথিবীর এত কাছ দিয়ে গেলেও, বিজ্ঞানীরা এটিকে শনাক্ত করতে পারেন এর বহু ঘণ্টা পরে।
এই গ্রহাণুটি, যা পূর্বে C15KM95 নামে পরিচিত ছিল, দক্ষিণ মেরুর অ্যান্টার্কটিকার উপর দিয়ে ঘণ্টায় ২০.৯ কিলোমিটার বেগে ছুটে যায়। এটির আনুমানিক ব্যাস ছিল ১ থেকে ৩ মিটার, যা একটি ছোট গাড়ির আকারের সমান। এই আকারের বস্তু সাধারণত বিপজ্জনক বলে বিবেচিত হয় না; বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করলে এগুলি উজ্জ্বল অগ্নিগোলক তৈরি করে মিলিয়ে যেতে পারে। তবে, এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে অপেক্ষাকৃত ছোট নিকট-পৃথিবী বস্তু (NEO) শনাক্তকরণে এখনও বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে।
'২০২৫ টিএফ'-কে প্রথম শনাক্ত করে অ্যারিজোনার কিট পিক ন্যাশনাল অবজারভেটরির বোক টেলিস্কোপ, যা এর পৃথিবীর কাছাকাছি আসার প্রায় ৬ ঘণ্টা পরে তথ্য সরবরাহ করে। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ESA)-এর প্ল্যানেটারি ডিফেন্স অফিস দ্রুত তৎপর হয়ে ওঠে এবং লেস কুম্ব্রেস অবজারভেটরির টেলিস্কোপ ব্যবহার করে এর সঠিক গতিপথ ও নিকটতম দূরত্ব নির্ণয় করে। বিজ্ঞানীরা এই পর্যবেক্ষণকে 'অবিশ্বাস্য কৃতিত্ব' হিসেবে দেখছেন, কারণ মহাকাশের বিশাল অন্ধকারে অনিশ্চিত অবস্থানে থাকা এমন ক্ষুদ্র বস্তুকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করা অত্যন্ত কঠিন।
এই ধরনের ছোট মহাজাগতিক বস্তু শনাক্তকরণের চ্যালেঞ্জগুলি সুদূরপ্রসারী। বর্তমানে, পৃথিবীর কাছাকাছি থাকা ১৪০ মিটারের চেয়ে ছোট প্রায় ৪০% NEO এখনও তালিকাভুক্ত হয়নি। নাসার জর্জ ই. ব্রাউন, জুনিয়র নিয়ার-আর্থ অবজেক্ট সার্ভে অ্যাক্ট অনুযায়ী ১৪০ মিটার বা তার চেয়ে বড় আকারের ৯০% NEO শনাক্ত করার লক্ষ্য থাকলেও, ছোট বস্তুগুলি সনাক্তকরণ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে প্রায়শই এড়িয়ে যায়। গ্রাউন্ড-ভিত্তিক টেলিস্কোপগুলির সীমিত সংবেদনশীলতা এবং আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীলতা এই ফাঁক তৈরি করছে।
এই অপ্রত্যাশিত নিকট-অভিসার আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে মহাজাগতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে পর্যবেক্ষণের পদ্ধতিগুলিতে গভীর মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। এই ধরনের ঘটনা কোনো ভয়ের কারণ নয়, বরং উপলব্ধ প্রযুক্তির উন্নতির জন্য এক স্পষ্ট ইঙ্গিত। গ্রহাণু '২০২৫ টিএফ' ২০৮৭ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত পৃথিবীর কাছাকাছি আসবে না বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই ক্ষুদ্র অতিথি আমাদের শেখায় যে, দৃশ্যমানতার বাইরেও অনেক কিছু রয়েছে, যা সতর্ক দৃষ্টির মাধ্যমে আয়ত্তে আনা সম্ভব।
উৎসসমূহ
EL IMPARCIAL | Noticias de México y el mundo
El Confidencial
ANSA Latina
TheSkyLive
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
মিল্কি ওয়ের কেন্দ্রে স্থিতিশীলতা: Стрелец А* এর চারপাশে বস্তুর নতুন তথ্য VLT তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে
পারসিভারেন্স রোভারের মাধ্যমে মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডলে বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গের সরাসরি প্রমাণ পেল নাসা
বেন্নু গ্রহাণু থেকে সংগৃহীত নমুনায় ট্রিপটোফ্যান আবিষ্কার: প্রাণের আদি উপাদান মহাজাগতিক উৎস থেকে আসার তত্ত্বকে জোরালো করল
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
