মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এর সন্ধ্যায় ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে একটি ৬.৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এর কেন্দ্রস্থল ছিল সেবু প্রদেশের বোগো সিটির প্রায় ১৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে, ১০ কিলোমিটার অগভীর গভীরতায়। এই ভূমিকম্পের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে তাৎক্ষণিক সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। ফিলিপাইন ইনস্টিটিউট অফ ভলকানোলজি অ্যান্ড সিসমোলজি (Phivolcs) একটি ছোট সমুদ্রপৃষ্ঠের অস্থিরতার সতর্কতা জারি করেছে। Phivolcs সেবু, লেয়তে এবং বিলিরান-এর উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের সমুদ্র উপকূল থেকে দূরে সরে যেতে এবং তাদের বাড়ি যদি উপকূলের কাছাকাছি হয় তবে আরও ভিতরের দিকে সরে যেতে পরামর্শ দিয়েছে। নৌকা মালিকদের তাদের নৌকা সুরক্ষিত করতে এবং জলপথ থেকে দূরে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, এবং যারা সমুদ্রে ছিলেন তাদের গভীর জলে থাকতে বলা হয়েছিল। বোগো সিটিতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের কাজ চলছে। সেবু সিটি এবং ভিলাবা, লেয়তেতে ৬ তীব্রতা এবং সান ফার্নান্দো, সেবুতে ৩ তীব্রতা রেকর্ড করা হয়েছে। বোগো সিটি এবং দানবানতায়ানে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের খবর পাওয়া গেছে। বোগো সিটিতে একটি ফাস্ট-ফুড বিল্ডিং আংশিকভাবে ধসে পড়ার এবং উত্তর সেবুর ঐতিহ্যবাহী গির্জাগুলির, যার মধ্যে দানবানতায়ানের আর্চডিওসেসান শ্রাইন অফ সান্তা রোজা দে লিমা এবং বানতায়ানের পারোকিয়া দে সান পেড্রো অ্যাপোস্টল অন্তর্ভুক্ত, ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। সেবুর সান রেমিগিও এবং মেডেলিন পৌরসভায় বেশ কয়েকজন হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। ভূমিকম্পের কারণে ১ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে সেবুর বিভিন্ন অংশে ক্লাস স্থগিত করা হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং বাসিন্দাদের সর্বশেষ তথ্য সম্পর্কে অবগত থাকতে ও নিরাপত্তা নির্দেশিকা অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ করছে।
ফিলিপাইন প্রশান্ত মহাসাগরীয় "রিং অফ ফায়ার"-এর উপর অবস্থিত, যা এটিকে ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এই "রিং অফ ফায়ার" অঞ্চলটি জাপান থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় বেসিন পর্যন্ত বিস্তৃত একটি তীব্র ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। এটি বিশ্বের প্রায় ৯০% ভূমিকম্প এবং বেশিরভাগ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের জন্য দায়ী। ঐতিহাসিকভাবে, ফিলিপাইন দেশটি ঘন ঘন ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয়েছে। ১৯১৮ সালের সেলেবস সাগর ভূমিকম্প (৮.৩ মাত্রা) এবং ১৯৯০ সালের লুজোন ভূমিকম্প (৭.৮ মাত্রা) এর মতো বড় ধরনের ভূমিকম্পগুলি এই অঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এই ধরনের ঘটনাগুলি কেবল তাৎক্ষণিক ধ্বংসই ডেকে আনে না, বরং দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবও ফেলে।
ভূমিকম্পের পর প্রশান্ত মহাসাগরীয় সুনামি সতর্কতা কেন্দ্র পরবর্তীতে তারা জানিয়েছে যে এই ভূমিকম্পের ফলে কোনও সুনামি হুমকি নেই এবং কোনও পদক্ষেপের প্রয়োজন নেই। তবে, এই ধরনের ঘটনাগুলি দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি এবং সচেতনতার গুরুত্ব তুলে ধরে। ভূমিকম্পের পর বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং কিছু অবকাঠামোগত ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। এই অঞ্চলটি প্রায়শই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়, যার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ও অন্তর্ভুক্ত। সম্প্রতি একটি ঘূর্ণিঝড় এই অঞ্চলে আঘাত হেনেছে, যার ফলে অন্তত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। এই ভূমিকম্পটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় "রিং অফ ফায়ার"-এর অংশ হিসেবে ফিলিপাইনের ভূতাত্ত্বিক অস্থিরতার একটি স্পষ্ট উদাহরণ। এই অঞ্চলে ভূমিকম্প এবং সুনামির ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।