পাকিস্তানের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি আরও গুরুতর আকার ধারণ করেছে। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (NDMA) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২৬শে আগস্ট, ২০২৫ পর্যন্ত দেশজুড়ে বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং ১,০৮৮ জন আহত হয়েছেন। বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে মৃতের সংখ্যা ৪৬৯ জনে দাঁড়িয়েছে। দেশের পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাব প্রদেশেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ভারতের বাঁধ থেকে পানি ছাড়ার পর সুতলজ ও রাভি নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এর ফলে পাঞ্জাবের নিম্নাঞ্চল থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই ঘটনাটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগের একটি বিরল উদাহরণ, কারণ দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
বuner জেলার পরিস্থিতি বিশেষভাবে ভয়াবহ। ১৫ই আগস্টের আকস্মিক মেঘভাঙা বৃষ্টিতে এই জেলায় শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং গ্রামগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এখানে মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং প্রায় ১০০ জন এখনও নিখোঁজ। এই দুর্যোগের ফলে হাজার হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। পাকিস্তান আবহাওয়া অধিদপ্তর (PMD) প্রধান নদীগুলোতে পানির স্তর বৃদ্ধির ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছে এবং নিচু এলাকাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, এই মৌসুমী বায়ু অন্তত ১০ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন যে এবারের বন্যা ২০২২ সালের বিধ্বংসী বন্যার মতো ভয়াবহ হতে পারে, যা ১,৭০০ জনেরও বেশি মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছিল এবং ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি করেছিল। বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে এই অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ও বন্যার জন্য দায়ী করছেন। পাকিস্তানের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই পরিস্থিতিতে, উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী বন্যা প্রতিরোধ ও মোকাবিলার জন্য কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।