অক্টোবর ২০২৫-এর শুরুতে কানাডার পূর্বাঞ্চলে এক অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহ দেখা দিয়েছে, যা কুইবেক ও অন্টারিও প্রদেশে রেকর্ড তাপমাত্রা সৃষ্টি করেছে। শক্তিশালী উচ্চচাপ বলয়ের প্রভাবে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেশি ছিল। মন্ট্রিল-ট্রিউডো বিমানবন্দরে ৫ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে তাপমাত্রা ২৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়, যা অক্টোবর মাসের সর্বকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড। এর আগে ২০২৩ সালে এই রেকর্ডটি হয়েছিল। সাগুইনে (২৯.২°C), ভাল-দোর (২৮.৮°C) এবং গ্যাটিঁনো (৩০.৩°C) শহরেও অস্বাভাবিক উষ্ণতা পরিলক্ষিত হয়। এমনকি উত্তর কুইবেকের কুউজজুয়াক অঞ্চলেও তাপমাত্রা প্রায় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছিল, যা এই সময়ের জন্য অত্যন্ত অস্বাভাবিক।
এই অস্বাভাবিক উষ্ণতা মন্ট্রিলের উত্তরে সক্রিয় দাবানলের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে, যার ফলে বায়ুর গুণগত মান হ্রাস পেয়েছে। কানাডা ইতিমধ্যেই ২০২৫ সালের জুন ও জুলাই মাসে একটি ভয়াবহ দাবানল মৌসুম পার করেছে, যেখানে ৮.৭৮ মিলিয়ন হেক্টর এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, যা বার্ষিক গড়ের চেয়ে অনেক বেশি। উচ্চ তাপমাত্রা এবং খরা পরিস্থিতি এই বছরটিকে রেকর্ড অন্যতম গুরুতর দাবানল মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কানাডার দাবানল মৌসুম দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র হচ্ছে। ২০২৫ সাল কানাডার ইতিহাসে দ্বিতীয় ভয়াবহ দাবানল মৌসুম হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে, যেখানে প্রায় ৮.৭৮ মিলিয়ন হেক্টর (২১.৭ মিলিয়ন একর) এলাকা পুড়ে গেছে। ২০২৩ সালের দাবানল মৌসুম আরও ভয়াবহ ছিল, যেখানে প্রায় ১৭.৬ মিলিয়ন হেক্টর এলাকা পুড়ে গিয়েছিল। ২০২৫ সালের দাবানল মৌসুমে ম্যানিটোবা এবং সাসকাচোয়ান পুড়ে যাওয়া এলাকার অর্ধেকেরও বেশি অংশ জুড়ে ছিল।
এই পরিস্থিতি শুধু কানাডার জন্যই নয়, বরং এটি একটি জাতীয় সংকট যা মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে ফেডারেল এবং প্রাদেশিক সরকারের সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। অক্টোবরের এই তাপপ্রবাহ কেবল দাবানলের ঝুঁকিই বাড়ায়নি, বরং এটি কানাডার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকেও স্পষ্ট করে তুলেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধরনের চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আরও ঘন ঘন এবং তীব্র হচ্ছে। এই উষ্ণতা কেবল বনভূমিই নয়, বরং জনবসতিপূর্ণ এলাকাতেও প্রভাব ফেলছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ। তাৎক্ষণিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, মঙ্গলবার একটি ঠান্ডা ফ্রন্ট আসার সাথে সাথে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের কাছাকাছি ফিরে আসবে। অটোয়ার মতো অঞ্চলে গত তিন মাসে স্বাভাবিকের অর্ধেকেরও কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় দীর্ঘস্থায়ী শুষ্ক আবহাওয়া আগুনের ঝুঁকির প্রতি দুর্বলতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।