ভারতের একমাত্র সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের বারেন দ্বীপে সম্প্রতি অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে। গত দুই দিনে, ১৩ এবং ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে, আগ্নেয়গিরিটি দুবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই ঘটনাগুলি ভারতের এই সক্রিয় আগ্নেয়গিরির সাম্প্রতিক কার্যকলাপের উপর আলোকপাত করে। বারেন দ্বীপ আগ্নেয়গিরিটি পোর্ট ব্লেয়ার থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং এটি ভারতের একমাত্র সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। ১৭৮৭ সাল থেকে এর অগ্ন্যুৎপাতের ইতিহাস নথিভুক্ত রয়েছে, যার মধ্যে ১৯৯১, ২০০৫, ২০১৭ এবং ২০২২ সালের উল্লেখযোগ্য অগ্ন্যুৎপাতগুলি অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখযোগ্যভাবে, দ্বিতীয় অগ্ন্যুৎপাতটি ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে আন্দামান সাগরে ৪.২ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের মাত্র দুই দিন পরে ঘটেছিল, যা এই অঞ্চলের ভূমিকম্প এবং আগ্নেয়গিরির ঘটনার মধ্যে আন্তঃসংযোগ তুলে ধরে।
সাম্প্রতিক অগ্ন্যুৎপাতগুলিতে ছাই এবং গ্যাস নির্গত হয়েছে, তবে পরিবেশ বা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উপর এর কোনও উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েনি। এই আগ্নেয়গিরিটি ৮.৩৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং এটি আগ্নেয় কার্যকলাপের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। এটি বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। বিজ্ঞানীরা এই আগ্নেয়গিরিটিকে প্লেট টেকটোনিক্স এবং আগ্নেয়গিরিবিদ্যার অধ্যয়নের জন্য একটি জীবন্ত পরীক্ষাগার হিসেবে বিবেচনা করেন।
সাম্প্রতিক অগ্ন্যুৎপাতগুলি, যদিও ছোটখাটো, তা গভীর ভূগর্ভস্থ কার্যকলাপের ইঙ্গিত দিতে পারে। এই অঞ্চলটি ভারতীয় এবং বার্মিজ টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত, যা প্রায়শই ভূমিকম্প এবং আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপের জন্য পরিচিত। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে এই অঞ্চলের অস্থির টেকটোনিক পরিস্থিতি এই অনিয়মিত অগ্ন্যুৎপাতের প্যাটার্নের জন্য দায়ী হতে পারে। কর্তৃপক্ষ আগ্নেয়গিরিটির উপর নজরদারি রাখছে এবং পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। জননিরাপত্তা এবং পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
বারেন দ্বীপ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতগুলি কেবল ভূতাত্ত্বিক অধ্যয়নের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্যের উপরও পরোক্ষ প্রভাব ফেলে। আগ্নেয়গিরির খনিজ সমৃদ্ধ জল আশেপাশের সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে সমৃদ্ধ করে, যা প্রবাল প্রাচীর এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছের আবাসস্থল। তবে, আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তার কারণে দ্বীপটি জনবসতিহীন। পর্যবেক্ষণ এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইট চিত্র, সিসমিক মনিটরিং এবং গ্যাস পরিমাপের মতো বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করছেন। এই আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ ভারতের ভূতাত্ত্বিক গতিশীলতার একটি শক্তিশালী প্রতীক, যা প্রকৃতি এবং বিজ্ঞানের মধ্যে এক অনন্য সংযোগ স্থাপন করে।