‘এপোক অফ ডিসক্লোজার’ চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার পরবর্তী প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ও বিবৃতি

পরিচালক ড্যান ফারাঘের নির্মিত তথ্যচিত্র ‘দ্য ডিসক্লোজার এরা’ (The Disclosure Era) গত ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই ব্যাপক জনআলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই চলচ্চিত্রটি একটি অত্যন্ত সাহসী দাবি উত্থাপন করে: বিগত আট দশক ধরে বিশ্বের বিভিন্ন সরকার ভিনগ্রহের সভ্যতা এবং মানুষের তৈরি নয় এমন প্রযুক্তির সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য গোপন করে রেখেছে। চলচ্চিত্র নির্মাতারা তাদের বক্তব্যকে জোরালো করতে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ, যেমন বিজ্ঞানী এবং প্রাক্তন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার ব্যবহার করেছেন, যারা উন্নত ভিনগ্রহী নকশার সম্ভাব্য অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণা করছেন।

চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হওয়ার পর যে বিষয়গুলি সবচেয়ে বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো জো রোগানের পডকাস্টে ড্যান ফারাঘের দেওয়া সাক্ষাৎকার। এই কথোপকথনে ফারাঘ দৃঢ়ভাবে জানান যে, তিনি বিশ্বাস করেন যে ১৯৪০-এর দশক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহু ভিনগ্রহী মহাকাশযানের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করেছে। তিনি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন যে, এই উদ্ধার করা প্রযুক্তির উপাদানগুলির সফলভাবে রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করা হয়েছে, যেখানে বেসরকারি প্রতিরক্ষা ঠিকাদার এবং নির্দিষ্ট সরকারি সংস্থা উভয়েই জড়িত ছিল। ফারাঘ এই গোপন কর্মসূচিতে জড়িত থাকার জন্য লকহিড মার্টিন, নর্থরপ গ্রুম্যান, রেথিওন এবং ব্যাটেলে-এর মতো বড় কর্পোরেশনগুলির নাম উল্লেখ করেন।

এরপর ফারাঘ বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন, যেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে চীন এবং রাশিয়াতেও অনুরূপ গোপন প্রকল্প বিদ্যমান। তিনি এই ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতাকে ‘স্টেরয়েডের উপর পারমাণবিক দৌড়ের’ সঙ্গে তুলনা করেন। পরিচালকের মতে, এই ব্যাপক গোপনীয়তা বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে, যা মানবজাতির জন্য উপকারী হতে পারত। এর ফলে আন্তঃনাক্ষত্রিক ভ্রমণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়তো পিছিয়ে পড়ছে।

একই সাক্ষাৎকারে ফারাঘ চলচ্চিত্রে প্রদর্শিত পদার্থবিজ্ঞানী হ্যাল পাথফের কথা উল্লেখ করেন। পাথফ এই প্রযুক্তিকে বিশ্বব্যাপী একটি ব্যাপক মানবিক আলোচনার বিষয় হিসেবে দেখার পক্ষে সওয়াল করেছেন, অনেকটা পারমাণবিক শক্তির নিয়ন্ত্রণের মতোই। পাথফের ধারণা, ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও, স্বচ্ছতাই হলো এই প্রযুক্তিগুলিকে বৃহত্তর কল্যাণে ব্যবহার করার এবং অপব্যবহার রোধ করার একমাত্র প্রয়োজনীয় পথ।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়ার মধ্যে ছিল প্রাক্তন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ডেভিড গ্রুশের ফক্স নিউজে ব্রেট বায়ারের সঙ্গে কথোপকথন। গ্রুশ নিশ্চিত করেন যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে এমন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে চোখ রেখেছেন যেখানে ভিনগ্রহী বস্তু এবং জৈবিক ধ্বংসাবশেষ উভয়েরই ছবি ছিল। তিনি এই সত্তাগুলির কার্যকলাপকে ‘মিশ্র’ বলে বর্ণনা করেন, যদিও তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলতে তিনি বিরত থাকেন। তবে তিনি অনুমান করেন যে পৃথিবীর জেনেটিক উপাদানের প্রতি তাদের আগ্রহ থাকতে পারে। গ্রুশ আরও ইঙ্গিত দেন যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউএফও (UFO) বিষয়ে অবগত এবং ভবিষ্যতের তথ্য প্রকাশে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন, যা পর্দার আড়ালের ঘটনা সম্পর্কে শীঘ্রই আনুষ্ঠানিক ঘোষণার ইঙ্গিত দেয়।

নতুন প্যারাডাইম ইনস্টিটিউটসহ (Institute of New Paradigm) বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী আয়োজনের জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়েছে। এই ইভেন্টগুলির মধ্যে ব্যক্তিগত সমাবেশ, সিনেমা প্রদর্শনী এবং ভার্চুয়াল সেশন অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২১শে নভেম্বর থেকে সিনেমাটি অ্যামাজন প্রাইম প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ভাড়া বা কেনার জন্য উপলব্ধ হয়েছে।

ইন্টারনেটে জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া মিশ্র—তীব্র উৎসাহ এবং উল্লেখযোগ্য সন্দেহের এক সংমিশ্রণ দেখা যাচ্ছে। যদিও দর্শকদের একাংশ ভবিষ্যতের আরও তথ্য প্রকাশের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, অন্যরা উপস্থাপিত তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এটা মনে রাখা জরুরি যে, চলচ্চিত্রটি মূলত গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের ভেতরের ব্যক্তিদের সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করে তৈরি, কিন্তু দাবি করা বস্তুগুলির কোনো অকাট্য ভৌত প্রমাণ, যেমন সরাসরি ছবি বা ভিডিও, সরবরাহ করেনি। আলোচনা এখনও সজীব রয়েছে, এবং পরিস্থিতি স্পষ্ট করতে সরকারি মহল থেকে ভবিষ্যতের বিবৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।