শনাক্তকরণ করা হয়েছে জটিল জৈব অণু, যা শনি গ্রহের চাঁদ এনসেলাডাসের বরফ-ঢাকা পৃষ্ঠের নিচে থাকা মহাসাগরে জীবনের অস্তিত্বের সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ১ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের কথা জানানো হয়েছে, যা মহাকাশযান ক্যাসিনি থেকে প্রাপ্ত ডেটা বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। এই গবেষণাটি মহাকাশ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, কারণ এটি এনসেলাডাসের মতো দূরবর্তী স্থানে জীবনের অস্তিত্বের সম্ভাবনাকে জোরালোভাবে সমর্থন করে।
গবেষণাটিতে দেখা গেছে যে, এনসেলাডাসের দক্ষিণ মেরু থেকে নির্গত বরফের কণাগুলিতে জটিল জৈব অণু বিদ্যমান, যার মধ্যে অ্যামিনো অ্যাসিডের পূর্বসূরীও রয়েছে। এই অণুগুলি মহাকাশে দীর্ঘ সময় ধরে বিকিরণের সংস্পর্শে আসার ফলে তৈরি হয়নি, বরং সরাসরি এনসেলাডাসের মহাসাগর থেকেই উদ্ভূত হয়েছে। ফ্রাঙ্ক পোস্টবার্গ, যিনি এই গবেষণার সহ-লেখক এবং একজন গ্রহ বিজ্ঞানী, তিনি বলেছেন যে এই আবিষ্কার প্রমাণ করে যে ক্যাসিনি শনির 'ই-রিং'-এ যে জটিল জৈব অণুগুলি সনাক্ত করেছিল, সেগুলি কেবল মহাকাশে দীর্ঘ সময় ধরে থাকার ফল নয়, বরং এনসেলাডাসের মহাসাগরে সহজেই পাওয়া যায়। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, এই অণুগুলির উপস্থিতি এনসেলাডাসের মহাসাগরে জটিল রাসায়নিক প্রক্রিয়া নির্দেশ করে, যা জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় যৌগ তৈরিতে সক্ষম।
এনসেলাডাস, যার ব্যাস প্রায় ৫০০ কিলোমিটার, এটি শনির একটি বরফ-ঢাকা উপগ্রহ। ২০০৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পরিচালিত ক্যাসিনি মিশনটি এই চাঁদের পৃষ্ঠের নিচে একটি বিশাল লবণাক্ত মহাসাগরের অস্তিত্ব এবং এর দক্ষিণ মেরু থেকে নির্গত বরফ-কণা ও বাষ্পের একটি স্রোত আবিষ্কার করেছিল। এই বরফের কণাগুলি, যা ২০০৮ সালে ক্যাসিনি মহাকাশযান দ্বারা সংগৃহীত হয়েছিল, সেগুলির বিশ্লেষণ থেকে এই নতুন তথ্য পাওয়া হয়েছে। বরফের কণাগুলি ১৮ কিমি/সেকেন্ড বেগে নির্গত হয়েছিল, যা তাদের সতেজতা এবং সরাসরি মহাসাগর থেকে উদ্ভূত হওয়ার প্রমাণ দেয়।
এই আবিষ্কারটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। ক্যারোলিন ফ্রেইসিনেট, যিনি একজন অ্যাস্ট্রোকেমিস্ট এবং এই গবেষণার সাথে জড়িত নন, তিনি বলেছেন যে এই অণুগুলি এনসেলাডাসের মহাসাগরে বিদ্যমান থাকার ব্যাপারে তেমন কোনো সন্দেহ নেই। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো আধুনিক প্রযুক্তি পুরনো ডেটা থেকে নতুন তথ্য বের করতে সাহায্য করছে। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ESA) এনসেলাডাসে অবতরণ এবং জীবনের লক্ষণ অনুসন্ধানের জন্য একটি মিশনের পরিকল্পনা করছে। এই ধরনের একটি মিশন ইউরোপকে সৌরজগৎ অনুসন্ধানে একটি অগ্রণী অবস্থানে নিয়ে যাবে। যদিও এই আবিষ্কার সরাসরি জীবনের প্রমাণ দেয় না, তবে এটি এনসেলাডাসকে ভিনগ্রহের জীবনের সন্ধানে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। এই আবিষ্কারটি আমাদের মহাবিশ্বে জীবনের সম্ভাবনা সম্পর্কে গভীর অনুসন্ধানের পথ খুলে দিয়েছে। গবেষণার প্রধান লেখক নোযাইর খাওয়াযা বলেছেন, "এই ফলাফলগুলি বাসযোগ্যতার সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে তোলে এবং একটি নতুন মিশনের প্রয়োজনীয়তাকে সমর্থন করে।" তিনি আরও যোগ করেছেন, "আমরা নিশ্চিত যে এই অণুগুলি এনসেলাডাসের ভূগর্ভস্থ মহাসাগর থেকে এসেছে, যা এর বাসযোগ্যতার সম্ভাবনা বাড়ায়।"