সার্ফিং কেবল একটি খেলা নয়, এটি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য একটি শক্তিশালী থেরাপিউটিক পদ্ধতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে উদ্বেগ, বিষণ্ণতা এবং মনোযোগের ঘাটতি জনিত সমস্যা (ADHD) মোকাবেলায় সার্ফ-থেরাপি বিশেষভাবে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ডিকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৮ থেকে ১৮ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে যারা উদ্বেগ, বিষণ্ণতা বা ADHD-তে ভুগছিল, তাদের উপর সার্ফ-থেরাপির ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে, সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়েছে এবং শারীরিক কার্যকলাপের মাধ্যমে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটেছে। এছাড়াও, সার্ফিং স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
যুদ্ধাহত বীরদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর সার্ফ-থেরাপির প্রভাব নিয়ে 'ওয়েভ অফ চেঞ্জ' নামক একটি নতুন গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। এই গবেষণাটি পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD) সহ অন্যান্য মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য সার্ফ-থেরাপিকে একটি কার্যকর সহায়ক চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সমুদ্র এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের সান্নিধ্য মানুষের মানসিক স্থিতিশীলতা বাড়ায় এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে, যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। মাত্র অল্প সময়ের জন্য হলেও প্রকৃতি এবং নীল জলরাশির (যেমন সমুদ্র) সংস্পর্শে আসা মানুষের মানসিক চাপ কমাতে এবং আবেগিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক।
যুক্তরাজ্যের 'দ্য ওয়েভ প্রজেক্ট' নামক একটি দাতব্য সংস্থা মানসিক সুস্থতা বৃদ্ধিতে সার্ফ-থেরাপির ব্যবহারকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা সকল স্তরের মানুষের জন্য সার্ফিংকে সহজলভ্য করে তুলেছে। তাদের কার্যক্রমে সার্ফিংয়ের উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতার সাথে প্রমাণিত থেরাপিউটিক কার্যকলাপ যুক্ত করা হয়, যা সহনশীলতা এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়ক একটি পরিবেশ তৈরি করে। এই সংস্থাটি তরুণদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি, সামাজিক বন্ধন তৈরি এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কৌশল শেখানোর উপর জোর দেয়, যা মানসিক চাপ কমাতে এবং একটি শক্তিশালী সম্প্রদায় গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
'ওয়েভস ফর চেঞ্জ'-এর মতো সংস্থাগুলোও সার্ফ-থেরাপির মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তারা সার্ফিংয়ের সাথে 'টেক ৫' ফ্রেমওয়ার্ককে একত্রিত করে একটি আনন্দদায়ক, সাংস্কৃতিক প্রাসঙ্গিক এবং তরুণ-নেতৃত্বাধীন মানসিক সুস্থতা কর্মসূচি তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা ইতিবাচক সামাজিক নেটওয়ার্ক তৈরি করতে এবং চাপের মুখে স্বাস্থ্যকর আবেগিক ও আচরণগত প্রতিক্রিয়া বিকাশে সহায়তা করে। এই পদ্ধতিটি তরুণদের মধ্যে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ এবং মানসিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে কার্যকর।
সমুদ্রের সান্নিধ্য এবং সার্ফিংয়ের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি একটি প্রমাণিত বিষয়। এটি কেবল শারীরিক ব্যায়ামই নয়, বরং এটি মনকে শান্ত করে, আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন শক্তি যোগায়। এই প্রাকৃতিক নিরাময় পদ্ধতিটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য একটি আশার আলো দেখাচ্ছে।