প্রশান্ত মহাসাগরের গভীর সমুদ্রের হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট অঞ্চলে চরম প্রতিকূল পরিবেশে নতুন প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণের সন্ধান পাওয়া গেছে। অত্যাধুনিক সাবমার্সিবল প্রযুক্তির সাহায্যে পরিচালিত একটি অভিযানে এই আবিষ্কারগুলি করা হয়েছে। এই নতুন আবিষ্কৃত জীবদের মধ্যে রয়েছে এক বিশেষ প্রজাতির টিউব ওয়ার্ম এবং বিভিন্ন ধরণের কেমোসিন্থেটিক ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়াগুলি আলোহীন পরিবেশে খাদ্য শৃঙ্খলের ভিত্তি তৈরি করে। ওশেনোগ্রাফিক ইনস্টিটিউটের গবেষকরা নমুনা এবং জেনেটিক উপাদান সংগ্রহ করেছেন যা আরও গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হবে। এই আবিষ্কার পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম আবাসস্থলগুলিতে জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত করেছে এবং জীবনের স্থিতিস্থাপকতাকে তুলে ধরেছে।
এই প্রজাতিগুলির অনন্য অভিযোজন এবং তাদের সম্ভাব্য প্রয়োগগুলি অন্বেষণ করার জন্য আরও গবেষণা করা হবে। গভীর সমুদ্রের হাইড্রোথার্মাল ভেন্টগুলি, যা সমুদ্রের তলদেশে উষ্ণ প্রস্রবণ হিসেবে পরিচিত, সেখানে জীবনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। এই অঞ্চলগুলি সাধারণত প্রায় ২০০০ থেকে ৩০০০ মিটার (প্রায় ৬৫০০ থেকে ১০০০০ ফুট) গভীরে অবস্থিত হলেও, প্রশান্ত মহাসাগরের কুরিল-কামচাটকা এবং আলেউতীয় খাদে চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণায় ৯.৫ কিলোমিটার পর্যন্ত গভীরতম পরিচিত বাস্তুতন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, যেখানে তাপমাত্রা এবং চাপ অত্যন্ত বেশি। এই চরম পরিবেশ সত্ত্বেও, কেমোসিন্থেটিক ব্যাকটেরিয়াগুলি সালফার বা মিথেনের মতো রাসায়নিক যৌগ ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদন করে, যা টিউব ওয়ার্ম এবং অন্যান্য জীবের খাদ্যের উৎস।
বিশেষভাবে, জায়ান্ট টিউব ওয়ার্ম প্রায় ৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং এদের কোনো মুখ, পেট বা অন্ত্র নেই। এরা তাদের শরীরের অভ্যন্তরে থাকা সহজীবী ব্যাকটেরিয়ার উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে, যা সালফাইডকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে। গবেষকরা, যেমন উডস হোল ওশেনোগ্রাফিক ইনস্টিটিউশনের বিজ্ঞানীরা, এই ধরণের পরিবেশে নতুন প্রজাতির সন্ধান করছেন।
সম্প্রতি, প্রশান্ত মহাসাগরের একটি হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট অঞ্চলে 'ক্র্যাব স্পা' নামে পরিচিত স্থানে একটি নতুন ধরণের ব্যাকটেরিয়া, Hydrogenimonas cancrithermarum, আবিষ্কৃত হয়েছে। এটি ব্যাকটেরিয়ার বিবর্তন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। এই আবিষ্কারগুলি কেবল জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানই বৃদ্ধি করে না, বরং জীবনের টিকে থাকার অসাধারণ ক্ষমতা এবং চরম পরিবেশে নতুন জীবনের সম্ভাবনাকেও তুলে ধরে। এই ধরণের গবেষণাগুলি পৃথিবীর জীবন এবং অন্যান্য গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে আরও প্রসারিত করবে।