সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকার ইংরেজি জলসীমার ৪১টি সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকায় (Marine Protected Areas - MPAs) বটম ট্রলিং (Bottom Trawling) নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করেছে। এই পদ্ধতিটি সমুদ্রের তলদেশে বিশাল জাল টেনে মাছ ধরার একটি ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়া, যা সামুদ্রিক আবাসস্থল এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে। এই প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞা প্রায় ৩০,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হবে এবং এটি সাবটাইডাল স্যান্ডব্যাঙ্ক (subtidal sandbanks) এবং কাদা-পলিযুক্ত তলদেশের (muds) মতো সংবেদনশীল সামুদ্রিক পরিবেশকে রক্ষা করবে। জুন ২০২৫-এ শুরু হওয়া একটি জনমত যাচাই প্রক্রিয়া বর্তমানে (২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) শেষের পথে।
পরিবেশবাদীরা এই উদ্যোগকে ব্যাপকভাবে সমর্থন জানিয়েছেন, কারণ একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৮০% জনসাধারণ স্থলভাগের প্রাণীদের মতোই সামুদ্রিক বন্যপ্রাণী সুরক্ষার পক্ষে। তবে, কিছু মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা এই নিষেধাজ্ঞার ফলে তাদের উপকূলীয় সম্প্রদায় এবং মৎস্য নৌবহরের উপর সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বটম ট্রলিং সমুদ্রের তলদেশের বাস্তুতন্ত্রের উপর গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। এই পদ্ধতিতে ব্যবহৃত ভারী জালগুলি সমুদ্রের তলদেশকে ধ্বংস করে দেয়, যা প্রবাল প্রাচীর (coral reefs) এবং সিগ্রাস (seagrass) মেডোগুলির মতো গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থলগুলির ক্ষতি করে। সিগ্রাস পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কার্বন শোষক, যা গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্টের চেয়ে ৩৫ গুণ দ্রুত কার্বন শোষণ করতে পারে। বটম ট্রলিং এই সিগ্রাস মেডোগুলিকে ধ্বংস করে বার্ষিক প্রায় ৪০% মার্কিন পরিবহন নির্গমনের সমতুল্য কার্বন নিঃসরণ করে। এটি কেবল জীববৈচিত্র্যই হ্রাস করে না, বরং কার্বন চক্রকেও ব্যাহত করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে বটম ট্রলিংয়ের ফলে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ৫০% পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে এবং এই বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার হতে ১৫ বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে। এই পদ্ধতিটি অ-লক্ষ্যযুক্ত প্রজাতিগুলিকেও (bycatch) ধরে ফেলে, যার মধ্যে অনেক বিপন্ন বা সুরক্ষিত প্রাণীও থাকে। এই অনিচ্ছাকৃত মাছ ধরা মৎস্য সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনাকে ব্যাহত করে।
যুক্তরাজ্য সরকার এই জনমত যাচাই প্রক্রিয়ার সমস্ত মতামত পর্যালোচনা করার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। পরিবেশগত সুরক্ষা এবং মৎস্য শিল্পের স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা এই সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য। এই পদক্ষেপটি যুক্তরাজ্যের সমুদ্রের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সামুদ্রিক জীবন সংরক্ষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।