পৃথিবীর মহাসাগর: যখন মহাদেশগুলি গভীরে বিলীন হয়—গ্রহের আগ্নেয় শ্বাসের নতুন উৎস
সম্পাদনা করেছেন: Inna Horoshkina One
২০২৫ সালের ১২ নভেম্বর, সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় (University of Southampton)-এর বিজ্ঞানীরা একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা দলের সাথে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গতিশীলতা সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে বদলে দেওয়া তথ্য প্রকাশ করেছেন। 'নেচার জিওসায়েন্স' (Nature Geoscience) এবং 'সায়েন্স ডেইলি' (ScienceDaily) জার্নালে প্রকাশিত এই নতুন গবেষণাটি একটি বিরল এবং ধীর প্রক্রিয়া উন্মোচন করে, যেখানে মহাদেশের অংশগুলি আক্ষরিক অর্থে নীচ থেকে 'ছিঁড়ে যায়' এবং মহাসাগরীয় ম্যান্টলে (mantle) চলে যায়, যা গভীর সমুদ্রের আগ্নেয়গিরিগুলিকে শক্তি যোগায়।
গবেষকরা এই ঘটনাটিকে 'ম্যান্টল ওয়েভস' (mantle waves) বা 'ম্যান্টল তরঙ্গ' নাম দিয়েছেন, যা ১৫০ থেকে ২০০ কিলোমিটার গভীরতায় ঘটে। এই তরঙ্গগুলি মহাদেশগুলির ভিত্তি বরাবর ধীরে ধীরে অগ্রসর হয় এবং তাদের প্রাচীন মূলগুলিকে বিচ্ছিন্ন করে ১০০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে পরিবহন করে। এভাবেই টেকটোনিক প্লেটের সীমানা থেকে বহু দূরে অবস্থিত মহাসাগরীয় আগ্নেয়গিরির লাভাতে 'মহাদেশীয়' রাসায়নিক উপাদানগুলির রহস্যময় উপস্থিতি ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়েছে, যা পূর্বে ভূ-রসায়নবিদদের কাছে একটি বড় ধাঁধা ছিল।
পূর্বে, এই সমৃদ্ধ উপাদানগুলির উৎসকে একটি অমীমাংসিত রহস্য হিসাবে বিবেচনা করা হত। এখন এটি স্পষ্ট যে ম্যান্টলের গভীর স্রোতগুলি মহাদেশগুলির প্রাচীন ধ্বংসাবশেষকে মহাসাগরীয় প্লেটের নিচে নিয়ে যায়, যা লুকানো চ্যানেল তৈরি করে যেখান থেকে নতুন ম্যাগমার জন্ম হয়। এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ধীর গতিতে চলে—প্রতি বছর মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার, তবে এটিই গ্রহের অভ্যন্তরীণ দীর্ঘমেয়াদী বিবর্তনকে রূপ দেয় এবং পৃথিবীর ভূ-গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
গবেষকরা অনুমান করেন যে দক্ষিণ আটলান্টিক এবং ভারত মহাসাগরের নিচেও অনুরূপ প্রক্রিয়া ঘটছে, যা মহাদেশ এবং মহাসাগরের মধ্যে এক গভীর সংযোগ স্থাপন করে। বিশেষত, এই 'ম্যান্টল তরঙ্গগুলি' আগ্নেয় দ্বীপপুঞ্জ যেমন ট্রিস্টান-দা-কুনহা (Tristan da Cunha), কের্গুয়েলেন (Kerguelen), এবং হাওয়াই (Hawaii)-এর গঠনের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে, যেখানে লাভাগুলির রাসায়নিক স্বাক্ষর প্রাচীন মহাদেশীয় চিহ্ন নির্দেশ করে।
সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রধান অধ্যাপক সাইমন ক্যাটলিন (Professor Simon Catlin) এই আবিষ্কারের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “আমরা প্রথমবারের মতো দেখছি যে মহাদেশগুলি বিভক্ত হয়ে জলের নিচে চলে যাওয়ার পরেও কীভাবে পৃথিবীর ভূ-রসায়নকে প্রভাবিত করে চলেছে। গ্রহটি তার রূপগুলি মনে রাখে।”
এই যুগান্তকারী আবিষ্কারটি কেবল দীর্ঘদিনের একটি ভূ-রাসায়নিক ধাঁধার সমাধানই করে না, বরং প্রতীকীভাবে মহাদেশ এবং মহাসাগরগুলিকে গ্রহের একক শ্বাসের সাথে সংযুক্ত করে। এখন পরিষ্কার যে পৃথিবী 'স্থল' এবং 'জল'-এ বিভক্ত নয়—এটি অবিচ্ছিন্নভাবে এক রূপ থেকে অন্য রূপে প্রবাহিত হচ্ছে। মহাদেশগুলি যেন শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো, ডুবে যাচ্ছে এবং আগ্নেয়গিরির রূপে পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে, প্রাচীন ভূখণ্ডের শক্তিকে বিশ্বের কাছে ফিরিয়ে আনছে, যা পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গতিশীলতার এক নতুন চিত্র তুলে ধরে।
উৎসসমূহ
ScienceDaily
Earth is slowly peeling its continents from below, fueling ocean volcanoes
How continents peel from below to trigger oceanic volcanoes
Scientists detect deep Earth pulses beneath Africa
Scientists detect deep Earth pulses beneath Africa
Scientists detect deep Earth pulses beneath Africa
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
