ক্রিসমাস দ্বীপে লাল কাঁকড়ার অভিবাসন: সময়ের আগেই শুরু, প্রকৃতির এক মহৎ দৃশ্য

সম্পাদনা করেছেন: Inna Horoshkina One

বার্ষিক লক্ষ লক্ষ উজ্জ্বল লাল কাঁকড়ার ক্রিসমাস দ্বীপে যাত্রা স্বাভাবিক সময়ের আগেই শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহান্তে হওয়া মৌসুমের প্রথম ভারী বর্ষণ এই প্রাচীন অভিবাসন প্রক্রিয়ার সূচনা করে, যা ভূমি এবং সমুদ্রকে প্রকৃতির এক অভিন্ন ছন্দে বেঁধে রাখে। এই ঘটনাটি তাদের জীবনচক্রের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং দ্বীপের বাস্তুতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

লক্ষ লক্ষ সন্ধিপদী প্রাণী তাদের জীবনচক্রের এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, অর্থাৎ ডিম পাড়ার জন্য, বনাঞ্চল থেকে উপকূলের দিকে এক স্রোতে ধাবিত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করেছেন যে অভিবাসনের এত আগে শুরু হওয়া সরাসরি প্রথম উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাতের সময়ের সাথে সম্পর্কিত। এই বৃষ্টিপাতই তাদের বংশবৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।

সাধারণত পুরুষ কাঁকড়ারা প্রথমে যাত্রা শুরু করে, উপকূলীয় সোপানগুলিতে পথ তৈরি করে এবং গর্ত খনন করে। পরে প্রজননের জন্য স্ত্রী কাঁকড়ারা তাদের সাথে যোগ দেয়। এই অভিবাসন সাধারণত প্রত্যাশিত ডিম পাড়ার চার থেকে পাঁচ সপ্তাহ আগে শুরু হয়। এই বছর ডিম পাড়ার প্রক্রিয়াটি নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে, এবং ডিসেম্বরে দ্বিতীয় চক্রের সম্ভাবনাও রয়েছে।

এই চলাচলের সঠিক সময় নির্ধারণ হয় চন্দ্রকলার মাধ্যমে: ডিম পাড়া হয় ভোরের আগে, চাঁদের শেষ চতুর্থাংশে, যখন জোয়ারের সর্বোচ্চ মাত্রা কমে আসে। প্রজননের পর পুরুষরা দ্বীপের অভ্যন্তরে ফিরে যায়, কিন্তু স্ত্রীরা ডিম ফোটানোর জন্য থেকে যায়—প্রত্যেকে প্রায় ১ লক্ষ পর্যন্ত ডিম বহন করে। দুই সপ্তাহ পরে, তারা তাদের বংশধরদের সমুদ্রে ছেড়ে দেয় এবং তারাও প্রত্যাবর্তন যাত্রা শুরু করে।

স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো এই ঘটনাটিকে “গ্রহের অন্যতম সেরা দৃশ্য” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন—এবং এটি যথার্থই। দ্বীপের সমস্ত জীবন্ত সত্তা এই লাল কাঁকড়াদের ছন্দের সাথে নিজেদের মানিয়ে নেয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য, যাদের জনসংখ্যা ১২০০ জনের বেশি নয়, এটি কেবল একটি প্রাকৃতিক ঘটনা নয়, বরং পৃথিবীর সাথে সহ-সৃষ্টির এক পবিত্র মৌসুম।

এই সময়ে রাস্তাঘাট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়, এবং বাসিন্দারা কাঁকড়াদের বাধা অতিক্রম করতে সহায়তা করে—কখনও কখনও শুধুমাত্র বাগানের নিড়ানি ব্যবহার করে তাদের নিরাপদে সমুদ্রের পথে চালিত করে। মানুষের এই সহযোগিতা নিশ্চিত করে যে কাঁকড়ারা যেন নির্বিঘ্নে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে।

বর্তমানে লাল কাঁকড়ার সংখ্যা প্রায় ১০০ মিলিয়ন বলে অনুমান করা হয়, যদিও পূর্বের গবেষণায় প্রায় ৪৩.৭ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক কাঁকড়ার কথা বলা হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন যে আক্রমণাত্মক হলুদ “পাগলা” পিঁপড়াদের নিয়ন্ত্রণ করার পর এই প্রজাতির জনসংখ্যা টেকসইভাবে পুনরুদ্ধার হয়েছে, যা আগে তাদের জন্য হুমকি ছিল। ক্রিসমাস আইল্যান্ড ন্যাশনাল পার্কের তথ্য অনুযায়ী, সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে, যা দ্বীপের বাস্তুতন্ত্রকে তার স্বাভাবিক প্রাচুর্য ও ভারসাম্যে ফিরিয়ে আনছে।

এই বার্ষিক মহাযাত্রা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে পৃথিবীর জীবন পারস্পরিক অংশগ্রহণের এক ঐকতান। যেখানে মানুষের সামান্যতম সমর্থনও গ্রহটিকে তার আদিম শ্বাস এবং শক্তি ফিরিয়ে দিতে পারে। সমুদ্রের দিকে প্রতিটি পদক্ষেপ যেন জীবনের নিজের দিকেই একটি পদক্ষেপ। লাল কাঁকড়ারা সেই ছন্দ মনে রাখে, যে ছন্দে স্পন্দিত হয় পৃথিবীর হৃদয়।

উৎসসমূহ

  • The Guardian

  • ABC News

  • Christmas Island National Park

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।