প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল বরাবর সামুদ্রিক তারা (sea star) বা স্টারফিশের ব্যাপক মৃত্যুর জন্য দায়ী মূল কারণ হিসেবে গবেষকরা ভাইব্রিও পেকটেনিসিডা (Vibrio pectenicida) নামক এক ধরণের ব্যাকটেরিয়াকে চিহ্নিত করেছেন। এই আবিষ্কারটি সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি একসময়ের সমৃদ্ধ সামুদ্রিক তারা প্রজাতিগুলির উপর আলোকপাত করে, যা এখন সামুদ্রিক তারা বর্জ্য রোগ (Sea Star Wasting Disease - SSWD) নামক এক বিধ্বংসী রোগের কারণে বিলুপ্তির পথে।
সূর্যমুখী সামুদ্রিক তারা (sunflower sea star), যা একসময় কেল্প বন (kelp forest) স্বাস্থ্য রক্ষায় মূল ভূমিকা পালন করত, SSWD-এর কারণে তাদের জনসংখ্যার ৯০% এরও বেশি হারিয়েছে। এই নাটকীয় পতন সমুদ্রের আর্চিন (sea urchin) জনসংখ্যাকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে, যা পরিণামে কেল্প বনকে ধ্বংস করে পুরো সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে ব্যাহত করেছে। সূর্যমুখী সামুদ্রিক তারাগুলি একটি 'কীস্টোন প্রজাতি' (keystone species) হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ তারা সমুদ্রের আর্চিনদের শিকার করে তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। আর্চিনদের সংখ্যা বেশি হলে তারা কেল্প বন খেয়ে ফেলে, যা সামুদ্রিক জীবনের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় আবাসস্থল।
ভাইব্রিয়ো পেকটেনিসিডা (Vibrio pectenicida) ব্যাকটেরিয়ার FHCF-3 স্ট্রেনকে এই রোগের প্রধান কারণ হিসেবে নিশ্চিত করা হয়েছে। দীর্ঘ এক দশক ধরে চলা গবেষণার পর, বিজ্ঞানীরা পরীক্ষাগারে এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটিয়ে রোগের লক্ষণগুলি পুনরায় তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, যা এর কার্যকারিতা প্রমাণ করে। এই ব্যাকটেরিয়া উষ্ণ জল পছন্দ করে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে এর বিস্তারের একটি সম্ভাব্য যোগসূত্র নির্দেশ করে।
এই রোগটি কেবল সূর্যমুখী সামুদ্রিক তারারাই নয়, প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের ২০টিরও বেশি প্রজাতির সামুদ্রিক তারাকে প্রভাবিত করেছে, যার ফলে ২০১৩ সাল থেকে প্রায় ৫ বিলিয়ন সামুদ্রিক তারা মারা গেছে। কিছু অঞ্চলে, সূর্যমুখী সামুদ্রিক তারার সংখ্যা ৯৯% পর্যন্ত কমে গেছে, যা কিছু ক্ষেত্রে আর্চিনদের সংখ্যায় ৩০০% এর বেশি বৃদ্ধি এবং কেল্প বনের ঘনত্বে ৩০% হ্রাস ঘটিয়েছে।
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে, প্রজাতিটির পুনরুদ্ধারের জন্য সংরক্ষণ প্রচেষ্টা চলছে। বার্চ অ্যাকোয়ারিয়াম (Birch Aquarium) এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত উদ্যোগে 'সেফ সানফ্লাওয়ার সি স্টার' (SAFE Sunflower Sea Star) উদ্যোগের মতো বন্দী প্রজনন কর্মসূচী আশা জাগাচ্ছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বার্চ অ্যাকোয়ারিয়ামে তিনটি সূর্যমুখী সামুদ্রিক তারার সফল প্রজনন এই প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। বিজ্ঞানীরা এখন এই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন সামুদ্রিক তারা সনাক্তকরণ এবং তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছেন।
এই আবিষ্কারটি কেবল সামুদ্রিক তারাদের জন্যই নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্যও একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টাগুলি আমাদের সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে।