একটি যুগান্তকারী গবেষণা গ্রীনল্যান্ডের ইকালোরুৎসিট কাঙ্গিলিট সেরমিয়াত (EKaS) হিমবাহে বরফ ভাঙার (calving) ফলে সৃষ্ট এক নতুন 'গুণক প্রভাব' (calving multiplier effect) উন্মোচন করেছে। এই ঘটনাটি ব্যাখ্যা করে যে কীভাবে বরফ ভাঙার ফলে সৃষ্ট ঢেউ এবং স্রোতগুলি বরফের নিচের অংশে গলন প্রক্রিয়াকে তীব্রতর করে তুলতে পারে, যা হিমবাহের পশ্চাদপসরণকে ত্বরান্বিত করতে পারে। গবেষণাটি একটি ফাইবার-অপটিক কেবল ব্যবহার করে বরফ ভাঙার কারণে সৃষ্ট আলোড়নগুলি পর্যবেক্ষণ করেছে। দেখা গেছে যে এই আলোড়নগুলি বরফের নিচের অংশে গলন বাড়িয়ে দেয়, যা একটি প্রতিক্রিয়া চক্র (feedback loop) তৈরি করে। এই প্রভাবটি বিশেষভাবে সেইসব অঞ্চলে বেশি দেখা যায় যেখানে জলের স্বাভাবিক স্রোত ধীর থাকে, কারণ তখন বরফ ভাঙার ফলে সৃষ্ট আলোড়নগুলির প্রভাব অনেক বেশি হয়। এই আবিষ্কারটি প্রচলিত মডেলগুলিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে, যেগুলিতে বরফের নিচের অংশে গলনের হারকে কম অনুমান করা হতে পারে। এটি হিমবাহের গতিপ্রকৃতি এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে তাদের অবদান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।
এই গুণক প্রভাবের উপর আরও গবেষণা হিমবাহের প্রক্রিয়াগুলি সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়াকে আরও উন্নত করার জন্য অত্যন্ত জরুরি। গবেষকরা, ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন এবং ইউনিভার্সিটি অফ জুরিখের নেতৃত্বে, দক্ষিণ গ্রীনল্যান্ডের ইকালোরুৎসিট কাঙ্গিলিট সেরমিয়াত হিমবাহের ফিয়র্ডে বরফ ভাঙার গতিপ্রকৃতি অধ্যয়নের জন্য একটি ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফাইবার-অপটিক কেবল ব্যবহার করেছেন। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে, তারা বরফ ভাঙার ফলে সৃষ্ট ঢেউ এবং জলের নিচের অংশে আলোড়নগুলি পরিমাপ করতে সক্ষম হয়েছেন, যা আগে সম্ভব ছিল না। এই গবেষণাটি 'নেচার' জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই নতুন তথ্যগুলি বরফ ভাঙার প্রক্রিয়া এবং সমুদ্রের জলের সাথে এর মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে আরও গভীর করেছে। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের উপর হিমবাহের পশ্চাদপসরণের প্রভাব বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রীনল্যান্ড বরফ খণ্ডগুলি বছরে প্রায় ৩.৬ ঘন কিলোমিটার বরফ সমুদ্রে নির্গত করে, যা প্রায় তিনগুণ রোনের হিমবাহের পরিমাণের সমান। এই বরফ ভাঙার ঘটনাগুলি কেবল বরফের ক্ষতিই করে না, বরং এটি সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা এবং স্রোতকেও প্রভাবিত করে, যা বরফের নিচের অংশে গলন প্রক্রিয়াকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এই প্রক্রিয়াটি বিশ্বজুড়ে অন্যান্য জলবাহী হিমবাহগুলিতেও ঘটছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।