বর্তমানে আর্কটিক মহাসাগরে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা অভিযান চলছে। গবেষণা জাহাজ আরভি ক্রোনপ্রিন্স হ্যাকন (R/V Kronprins Haakon)-এ ২৫ জন বিজ্ঞানী এই অভিযানে অংশ নিয়েছেন। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রায় ১,৩০,০০০ এবং ৪,০০,০০০ বছর আগের আন্তঃহিমযুগীয় সময়কালের আর্কটিকের জলবায়ু পরিস্থিতি পুনর্গঠন করা। এই সময়ের আর্কটিক মহাসাগর ঋতুভিত্তিক বরফ-মুক্ত ছিল, এবং বিজ্ঞানীরা সেই সময়ের তাপমাত্রা, সামুদ্রিক বরফ, সমুদ্রবিজ্ঞান এবং বাস্তুতন্ত্রের অবস্থা পুনর্গঠনের মাধ্যমে বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে তুলনা করছেন।
এই গবেষণাটি নরওয়ের ইউআইটি দ্য আর্কটিক ইউনিভার্সিটি অফ নরওয়ে (UiT The Arctic University of Norway) এবং জার্মানির আলফ্রেড ওয়েগনার ইনস্টিটিউট (Alfred Wegener Institute) সহ বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের অংশগ্রহণে পরিচালিত হচ্ছে। আলফ্রেড ওয়েগনার ইনস্টিটিউট ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আর্কটিক অঞ্চলে গবেষণা পরিচালনা করে আসছে এবং উত্তর মেরু অঞ্চল ও আর্কটিক মহাসাগরের দীর্ঘমেয়াদী আন্তঃবিভাগীয় বৈজ্ঞানিক গবেষণায় তাদের বিশেষ পরিচিতি রয়েছে।
এই যুগান্তকারী গবেষণাটি আর্কটিক জলবায়ু ব্যবস্থা উষ্ণতার প্রতি কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায় সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করবে। সংগৃহীত ডেটাগুলি জলবায়ু মডেলগুলিকে যাচাই এবং পরিমার্জন করতে ব্যবহৃত হবে, যা একটি বরফ-মুক্ত আর্কটিক পরিবেশ ও সমাজের জন্য কী অর্থ বহন করে তার একটি আরও সঠিক চিত্র প্রদান করবে। গবেষকরা বিশেষভাবে এই বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন যে আর্কটিক একটি 'ব্লু-ওশান' (নীল সমুদ্র) অবস্থার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে (tipping point) পৌঁছেছে কিনা।
আর্কটিকের বরফ গলার ফলে সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ, আর্কটিক মহাসাগরের আটলান্টিকরণ, বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন, আবহাওয়ার ধরণ পরিবর্তন, বরফ-অ্যালবেডো প্রতিক্রিয়া, মিথেন নিঃসরণ এবং একটি বরফ-মুক্ত আর্কটিকের নতুন ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতার মতো বৃহত্তর জলবায়ু চ্যালেঞ্জগুলি দেখা দিচ্ছে। আরভি ক্রোনপ্রিন্স হ্যাকন একটি অত্যাধুনিক বরফ-ভাঙ্গা সক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ, যা এক মিটার পুরু বরফ ভেদ করতে পারে এবং মেরু অঞ্চলের কঠিন পরিস্থিতিতে কাজ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি ১৫টি গবেষণাগার এবং উন্নত সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত, যা এটিকে আর্কটিক এবং অ্যান্টার্কটিক উভয় অঞ্চলেই পরিবেশগত এবং জলবায়ু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম করে। এই অভিযানটি কেবল পৃথিবীর অতীতের জলবায়ু সম্পর্কে জ্ঞানই গভীর করবে না, বরং এটি অভূতপূর্ব মানব-প্ররোচিত পরিবর্তনের মধ্যে আর্কটিকের ভবিষ্যৎ বিবর্তন সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ পূর্বাভাস দেবে।