আর্কটিক মহাসাগর বিশ্বব্যাপী গড়ের তুলনায় প্রায় তিন গুণ দ্রুত হারে উষ্ণ হচ্ছে। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো 'আটলান্টিফিকেশন' নামক একটি ত্বরান্বিত প্রক্রিয়ার উপর আলোকপাত করেছে, যেখানে উষ্ণ, লবণাক্ত আটলান্টিক জল আর্কটিক সামুদ্রিক পরিবেশকে ক্রমবর্ধমানভাবে প্রভাবিত করছে। এই আটলান্টিফিকেশন শিল্প-পূর্ববর্তী সময়ের শেষ দিকে শুরু হয়েছিল এবং এটি অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে আটলান্টিক অঞ্চলের প্রভাব ২০৬০ সালের দিকে সর্বোচ্চ হতে পারে। উষ্ণ জলের এই প্রবাহ আর্কটিকের সূক্ষ্ম জলবায়ু ব্যবস্থাকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করছে।
২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা বরফ গলার হার বৃদ্ধি এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণ হয়েছে। এই প্রবণতাগুলো আর্কটিকের পরিবর্তনগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত, যা ২০২৭ সালের মধ্যে গ্রীষ্মকালে বরফ-মুক্ত আর্কটিকের সম্ভাবনার বিষয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। আটলান্টিফিকেশন, যা আর্কটিক মহাসাগরে আটলান্টিক জলের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে বোঝায়, এই অঞ্চলের জলবায়ু ব্যবস্থায় একটি মৌলিক পরিবর্তন আনছে। উষ্ণ এবং লবণাক্ত আটলান্টিক জল উত্তর দিকে আর্কটিক মহাসাগরের গভীরে প্রবেশ করছে, যা পূর্বে শীতল ও কম লবণাক্ত পৃষ্ঠের জলের স্তরকে প্রভাবিত করছে।
এই প্রক্রিয়াটি ২০০৭ সাল থেকে আর্কটিক মহাসাগরের বরফ হ্রাসের প্রবণতাকে প্রভাবিত করেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, আর্কটিক ডিপোল নামক একটি বায়ুমণ্ডলীয় বৈশিষ্ট্যের পুনরাবৃত্তিমূলক চক্রের পরিবর্তনের সাথে সাথে বরফের আরও দ্রুত হ্রাস ঘটবে। গবেষকরা আরও দেখেছেন যে, ২০০৭ সাল থেকে আর্কটিক ডিপোলের ইতিবাচক শাসনের অধীনে থাকা নিম্নচাপ অঞ্চল থেকে উৎপন্ন বায়ুপ্রবাহ সাইবেরীয় নদীগুলি থেকে মিষ্টি জলকে আর্কটিক মহাসাগরের কানাডিয়ান সেক্টরে চালিত করে। ২০০৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এই মিষ্টি জলের পশ্চিমমুখী চলাচল ১৯৯২ থেকে ২০০৬ সালের তুলনায় আর্কটিকের সামগ্রিক বরফ হ্রাসের গতিকে ধীর করতে সাহায্য করেছে। মিষ্টি জলের স্তরটি ঘন হয়ে উঠেছে, যা নীচের ভারী লবণাক্ত জলের সাথে মেশার জন্য খুব পুরু এবং স্থিতিশীল। এই পুরু মিষ্টি জলের স্তর উষ্ণ লবণাক্ত জলকে নীচ থেকে বরফ গলানো থেকে বিরত রাখে।
২০২৪ সালের 'স্টেট অফ দ্য ক্লাইমেট' প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা এবং গ্রিনহাউস গ্যাস ঘনত্ব অভূতপূর্ব উচ্চতায় পৌঁছেছে। মহাসাগরগুলো আগের চেয়ে বেশি তাপ শোষণ করেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং হিমবাহগুলো আগের যেকোনো বছরের চেয়ে বেশি বরফ হারিয়েছে। এই পরিবর্তনগুলো আর্কটিকের উপর গভীর প্রভাব ফেলছে, যা বরফ গলার হার বৃদ্ধি এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে। ২০২৭ সালের মধ্যে গ্রীষ্মকালে বরফ-মুক্ত আর্কটিকের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।