আলোরের জলে ডুগং শাবকের জন্ম: আশার নতুন প্রতীক
সম্পাদনা করেছেন: Inna Horoshkina One
ইন্দোনেশিয়ার আলোর দ্বীপের মালি সৈকতের উপকূলবর্তী জলে একটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। ২০১৬ সালে পদ্ধতিগত পর্যবেক্ষণ শুরু হওয়ার পর এই প্রথমবার WWF-Indonesia-এর বিশেষজ্ঞরা একটি ডুগং (Dugong dugon) শাবকের জন্ম নিশ্চিত করেছেন। এটি কেবল একটি বিরল প্রাকৃতিক ঘটনা নয়, বরং এই অঞ্চলের সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের সজীবতা ও স্থিতিশীলতার একটি শক্তিশালী প্রমাণ—যা বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ সামুদ্রিক প্রজাতির অস্তিত্ব বজায় রাখতে সক্ষম।
প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে যে নবজাতক ডুগংটি দুটি প্রাপ্তবয়স্ক প্রাণীর সাথে সাঁতার কাটছে। বিজ্ঞানীদের কাছে এটি উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্যের একটি স্পষ্ট সূচক। কারণ ডুগংরা কেবল সেখানেই প্রজনন করে যেখানে সামুদ্রিক ঘাস বা সি-গ্রাস তৃণভূমিগুলি পরিষ্কার, ঘন এবং স্থিতিশীল থাকে। এই জলজ তৃণভূমিগুলিই তাদের খাদ্য ও সুরক্ষা প্রদান করে।
একই সাথে, এই সামুদ্রিক ঘাসগুলি তথাকথিত 'নীল কার্বন' (blue carbon) সঞ্চয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি একটি প্রাকৃতিক ভান্ডার, যা তলদেশের পলিতে লক্ষ লক্ষ টন কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂) আবদ্ধ করে রাখে। ডুগংদের উপস্থিতি তাই কেবল তাদের প্রজাতির জন্য নয়, বৈশ্বিক জলবায়ু স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
ইন্দোনেশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৯৯ সালেই ডুগংদের সম্পূর্ণ সুরক্ষার আওতায় এনেছিল। দীর্ঘমেয়াদী এই সংরক্ষণ উদ্যোগের ফল এখন দৃশ্যমান ও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। WWF-Indonesia, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সহযোগিতা এখন এক নতুন স্তরে পৌঁছেছে। আগামী মাসগুলিতে, আলোরে সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের উপর একটি ব্যাপক গবেষণা শুরু হতে চলেছে, যার লক্ষ্য হলো ডুগং জনসংখ্যার সংখ্যা এবং সামুদ্রিক তৃণভূমির অবস্থার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা।
বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেন যে, “একটি প্রজাতির মঙ্গল পুরো মহাসাগরের অখণ্ডতা ছাড়া সম্ভব নয়।” এই গবেষণাটি বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থাপনার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যেখানে প্রতিটি ঘাস এবং প্রতিটি ঢেউয়েরই গুরুত্ব রয়েছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা কীভাবে প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ককে পুনরুদ্ধার করতে পারে, এই জন্ম তারই প্রমাণ।
আলোর জলসীমার অংশ, পান্তারা প্রণালী সংরক্ষিত অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরেই ডুগংদের একটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। এদের মধ্যে বিখ্যাত 'মাওয়ার' (Mawar) নামের একটি বন্ধুত্বপূর্ণ ডুগং রয়েছে, যা প্রায়শই মালি সৈকতের কাছে দেখা যেত এবং মানুষ ও সমুদ্রের মধ্যে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছিল।
এই সংরক্ষণের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে স্থানীয় পর্যবেক্ষণ গোষ্ঠী, যেমন পোকমাসওয়াস সিনা কাবোলা (Pokmaswas Sinar Kabola), গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই স্বেচ্ছাসেবকরা পরিবেশ সুরক্ষা নিয়মাবলী মেনে চলা নিশ্চিত করে, নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার প্রতিরোধ করে এবং বিজ্ঞানীদের তথ্য সংগ্রহে সহায়তা করে। তাদের সক্রিয় ভূমিকার ফলেই আলোর এমন একটি স্থান হিসেবে টিকে আছে, যেখানে মানুষ এবং সমুদ্র এক সুরে নিঃশ্বাস নেয়।
ডুগংরা কেবল প্রাণী নয়। তারা হলো পৃথিবীর অবস্থার আয়না, বিশুদ্ধতা এবং ভারসাম্যের ব্যারোমিটার। যখন একটি শাবকের জন্ম হয়, তখন যেন সমুদ্র বলে ওঠে: “তোমরা আমার কথা শুনেছো।” এই ঘটনাটি একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত যে যত্ন, শ্রদ্ধা এবং ধৈর্য সত্যিই জীবন ফিরিয়ে আনতে পারে এবং প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ককে নতুন করে গড়ে তুলতে পারে।
উৎসসমূহ
Mongabay
Indonesia eyes seagrass zoning for blue carbon; experts urge community benefits
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
