CRISPR প্রযুক্তির সাহায্যে চীনা বিজ্ঞানীরা ছত্রাক থেকে তৈরি করলেন মাংসের উন্নত ও সহজে হজমযোগ্য বিকল্প
সম্পাদনা করেছেন: An goldy
চীনের উক্সি শহরের জিয়াংনান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাঁরা CRISPR প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছত্রাক, বিশেষত ফিউসারিয়াম ভেনেটাটাম (Fusarium venenatum) থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন উৎসের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। এর মূল উদ্দেশ্য হলো লাল মাংসের একটি কার্যকর বিকল্প তৈরি করা। বিশ্বজুড়ে পরিবেশবান্ধব খাদ্যের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে, কারণ প্রচলিত পশু পালন ব্যবস্থা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন এবং ভূমি সম্পদের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে। এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন সহ-লেখক জিয়াও লিউ, এবং এর ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে 'ট্রেন্ডস ইন বায়োটেকনোলজি' নামক জার্নালে।
এই জেনেটিক্যালি উন্নত ছত্রাক স্ট্রেনটির নাম দেওয়া হয়েছে FCPD। এটি মূল ছত্রাকের তুলনায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি প্রদর্শন করে। সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো, এই প্রক্রিয়ায় ছত্রাকের কোষ প্রাচীরের মূল উপাদান কাইটিনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে। কাইটিন একটি শক্ত পলিমার, যা মানবদেহে সহজে হজম হয় না। কাইটিন কমে যাওয়ায় FCPD-এর প্রোটিনগুলি স্বাভাবিক ছত্রাকের তুলনায় মানুষের জন্য অনেক বেশি সহজপাচ্য হয়ে উঠেছে। এটি একটি বিশাল অগ্রগতি, কারণ খাদ্যের পুষ্টিগুণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
এছাড়াও, এই জেনেটিক পরিবর্তনের ফলে ছত্রাকের বিপাক প্রক্রিয়া আরও অনুকূল হয়েছে। বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন যে প্রোটিন উৎপাদনের জন্য FCPD আগের তুলনায় প্রায় ৮৮% দ্রুত বৃদ্ধি পায়। একই সঙ্গে, প্রোটিন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় গ্লুকোজের চাহিদাও ৪৪% কমে গেছে। শুকনো ওজনের ভিত্তিতে FCPD-এর প্রোটিনের পরিমাণ মাংসের পণ্যের কাছাকাছিই রয়েছে। তবে এর একটি বিশেষ সুবিধা হলো, অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিড সূচক (EAAI) ৩২.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এটিকে পুষ্টিগত দিক থেকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে।
এই নতুন স্ট্রেনের পরিবেশগত শ্রেষ্ঠত্ব জীবনচক্র মূল্যায়ন (LCA) দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। চীনের মুরগি উৎপাদনের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, মাইকোপ্রোটিন FCPD উৎপাদনের জন্য ৭০% কম জমির প্রয়োজন হয়। একই সঙ্গে, এটি মিঠা পানির দূষণের ঝুঁকি ৭৮% হ্রাস করে। মজার বিষয় হলো, এই সুবিধাগুলি বজায় থাকে, এমনকি যদি উৎপাদন অঞ্চলগুলি কয়লা-নির্ভর বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ওপর বেশি নির্ভরশীল হয় তবুও। এটি প্রমাণ করে যে এই প্রযুক্তি পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কতটা কার্যকর হতে পারে।
গবেষকরা ৫০০০ লিটারের ফার্মেন্টেশন প্ল্যান্টে এই উন্নতিগুলি শিল্প পর্যায়ে পরীক্ষা করে নিশ্চিত করেছেন। সহ-লেখক জিয়াওহুই উ জোর দিয়ে বলেছেন যে FCPD একই সঙ্গে পুষ্টির মান বৃদ্ধি এবং পরিবেশগত পদচিহ্ন কমানোর দ্বৈত লক্ষ্য পূরণ করে, যা পূর্ববর্তী প্রচেষ্টাগুলির ক্ষেত্রে সম্ভব হয়নি। যেহেতু CRISPR/Cas9 ব্যবহার করে যে পরিবর্তনগুলি আনা হয়েছে, সেগুলি 'সীমলেস' এবং এতে কোনো বহিরাগত ডিএনএ প্রবেশ করানো হয়নি, তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো কিছু দেশে এই পণ্যগুলিকে প্রচলিত জিএমও (GMO) হিসেবে চিহ্নিত নাও করা হতে পারে, যা বাজারে দ্রুত প্রবেশের পথ সুগম করতে পারে। ২০৫০ সালের মধ্যে যখন প্রাণীজ প্রোটিনের চাহিদা দ্বিগুণ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে, তখন এই উদ্ভাবন কৃষি খাতের ওপর চাপ কমাতে এক শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।
উৎসসমূহ
Slate.fr
Earth.com
AZoNetwork
Popular Science
The Debrief
ScienceDaily
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
