চীনের বিজ্ঞানীরা এক যুগান্তকারী উদ্ভাবন করেছেন যা আলোকসজ্জার ধারণাকে বদলে দিতে পারে। তারা সাকুলেন্ট গাছের পাতায় স্ট্রনশিয়াম অ্যালুমিনেট নামক উপাদান ব্যবহার করে এমন এক ধরনের গাছ তৈরি করেছেন যা অন্ধকারে আলো ছড়ায়। এই গাছগুলি দিনের বেলায় সূর্যের আলো শোষণ করে এবং রাতে ছোট প্রদীপের মতো আলো বিকিরণ করে। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পরিবেশবান্ধব এবং সাশ্রয়ী আলোকসজ্জার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
দক্ষিণ চীন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজিস্ট শুটিং লিউ-এর নেতৃত্বে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। তারা স্ট্রনশিয়াম অ্যালুমিনেট নামক উপাদান ব্যবহার করে লাল, নীল এবং সবুজ রঙের আলো তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এই আলো-ছড়ানো গাছগুলি সৌরশক্তি সঞ্চয় করে রাতে মৃদু আলো প্রদান করতে পারে, যা বাগান এবং জনবহুল স্থানগুলিকে এক নতুন, ভবিষ্যৎমুখী অথচ প্রাকৃতিক রূপ দিতে পারে। এই আবিষ্কারটি 'অ্যাভাটার' সিনেমার আলোকিত বনের মতো এক স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার পথে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাস্তার আলোগুলোকেও গাছের আলো দিয়ে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে।
এই গাছগুলির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এদের তৈরি করতে খরচ কম এবং প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ। মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে একটি গাছ তৈরি করা সম্ভব, যার খরচ প্রায় ১.৪০ ডলার। তবে, এই প্রযুক্তির কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বিজ্ঞানীরা আরও গবেষণা করছেন যাতে এই আলোর স্থায়িত্ব বাড়ানো যায় এবং ব্যবহৃত ন্যানো পার্টিকেলগুলি মানুষ ও পরিবেশের জন্য নিরাপদ থাকে। বর্তমানে এই গাছগুলির আলোর তীব্রতা প্রচলিত শহুরে আলোকসজ্জার বিকল্প হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। ভবিষ্যতে আলোর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি এবং পার্শ্ববর্তী উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের উপর কোনো বিরূপ প্রভাব যাতে না পড়ে, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, সাকুলেন্ট গাছের পাতার গঠন এমন যে, এটি পার্টিকেলগুলিকে সহজে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে, যার ফলে পুরো পাতা সমানভাবে আলোকিত হয়। অন্যান্য গাছ, যেমন বক চয় বা গোল্ডেন পোথোস, এই ক্ষেত্রে ততটা কার্যকর প্রমাণিত হয়নি। এই আলো-ছড়ানো গাছগুলি কেবল পরিবেশবান্ধব আলোকসজ্জাই নয়, বরং নগর পরিকল্পনা এবং স্থাপত্যেও নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। যদিও এই প্রযুক্তি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে এটি ভবিষ্যতে আমাদের চারপাশের পরিবেশকে আরও সুন্দর ও টেকসই করে তোলার অপার সম্ভাবনা বহন করে।