সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিগুলি ইঙ্গিত দেয় যে উদ্ভিদ জগতে প্রাণীদের মতো উন্নত সংবেদনশীলতা এবং যোগাযোগের ক্ষমতা রয়েছে। নতুন গবেষণাগুলি প্রকাশ করেছে যে উদ্ভিদগুলি তাদের পরিবেশকে আশ্চর্যজনক উপায়ে উপলব্ধি করতে এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।
পিটার এ. গ্লর (Peter A. Gloor) দ্বারা জুন ২০২৫-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা, "প্ল্যান্ট বায়োইলেকট্রিক আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেমস: এ ফাইভ-ইয়ার ইনভেস্টিগেশন ইনটু হিউম্যান-প্ল্যান্ট ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক কমিউনিকেশন" (Plant Bioelectric Early Warning Systems: A Five-Year Investigation into Human-Plant Electromagnetic Communication), দেখিয়েছে যে মানুষের সান্নিধ্য এবং মানসিক অবস্থার প্রতিক্রিয়ায় উদ্ভিদগুলি স্বতন্ত্র বায়োইলেকট্রিক সংকেত তৈরি করে। এই গবেষণাটি উদ্ভিদের ভোল্টেজ স্পেকট্রোগ্রাম বিশ্লেষণ করে মানুষের আবেগ সনাক্তকরণে ৯৭% নির্ভুলতা অর্জন করেছে। এই ফলাফলগুলি ইঙ্গিত দেয় যে উদ্ভিদগুলি শারীরিক যোগাযোগের আগেই তাদের বায়োইলেকট্রিক ক্ষেত্রের পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্ভাব্য বিপদ সনাক্ত করার জন্য প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে, যা তাদের টিকে থাকার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হতে পারে।
উদ্ভাবনের আরও একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Tokyo) গবেষকদের দ্বারা সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ উন্মোচিত "প্ল্যান্টবট" (Plantbot) প্রকল্প। এই প্রকল্পটি একটি জীবন্ত উদ্ভিদকে একটি মোবাইল রোবটের সাথে একীভূত করে, যা বৃহৎ ভাষা মডেল (large language model) দ্বারা চালিত। এটি জৈবিক এবং রোবোটিক ডোমেনের মধ্যে একটি নতুন ধরনের কৃত্রিম জীবন তৈরি করেছে। "প্ল্যান্টবট" উদ্ভিদের অবস্থাকে রোবোটিক ক্রিয়াকলাপে অনুবাদ করে, যা উদ্ভিদ এবং প্রযুক্তির মধ্যে নতুন সহাবস্থানের সম্ভাবনা উন্মোচন করে। এই উন্নয়ন ইঙ্গিত দেয় যে ভবিষ্যতে উদ্ভিদগুলি রোবোটিক এক্সটেনশনের মাধ্যমে তাদের পরিবেশে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে।
এই অগ্রগতিগুলি উদ্ভিদকে নিষ্ক্রিয় জীব হিসাবে দেখার ঐতিহ্যবাহী দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। ২০২৪ সালে "বায়োলজি অ্যান্ড ফিলোসফি" (Biology & Philosophy) জার্নালে প্রকাশিত একটি সমালোচনামূলক পর্যালোচনায় উদ্ভিদ সংবেদনশীলতার (plant sentience) পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে, যা চেতনা দ্বারা সহজতর জ্ঞানীয় ক্ষমতার (cognitive abilities) সন্ধান করার জন্য গবেষকদের উৎসাহিত করছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে (Harvard University) মে ২০২৫-এ অনুষ্ঠিত "থিংকিং উইথ প্ল্যান্টস অ্যান্ড ফাঙ্গি: অ্যান ইন্টারডিসিপ্লিনারি এক্সপ্লোরেশন ইনটু দ্য মাইন্ড অফ নেচার" (Thinking with Plants and Fungi: An Interdisciplinary Exploration into the Mind of Nature) শীর্ষক আন্তঃবিভাগীয় সম্মেলনে এই পরিবর্তিত বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি আরও স্পষ্ট হয়েছে। এই সম্মেলনটি উদ্ভিদ এবং ছত্রাক কীভাবে মন এবং প্রকৃতির ধারণাগুলিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে এবং পরিবর্তিত পরিবেশগত পরিস্থিতিতে আমাদের সম্পর্ককে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য বিশেষজ্ঞদের একত্রিত করেছে।
এই গবেষণাগুলি কেবল উদ্ভিদের জটিল যোগাযোগ ব্যবস্থাকেই তুলে ধরে না, বরং প্রকৃতি এবং প্রযুক্তির মধ্যে নতুন সম্ভাবনার দ্বারও উন্মোচন করে।