জেরেমী ফ্যান্ট, শিকাগো বোটানিক গার্ডেনের কনজারভেশন ডিরেক্টর, প্রায় ১৫ বছর ধরে তাঁর উইকার পার্কের ছোট্ট ব্যালকনিটিকে ইলিনয়ের দেশীয় বুনো ফুলে ভরে তুলেছেন। তিনি প্রায় ২০০ প্রজাতির প্রায় ২০০ বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, যা ছোট পাত্রে এবং শিকাগোর তীব্র শীতের মধ্যেও টিকে থাকতে সক্ষম। অস্ট্রেলিয়ায় তাঁর শৈশব থেকেই প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা তাঁকে স্থানীয় জলবায়ু ও মাটির সঙ্গে মানানসই গাছপালা নিয়ে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করেছে।
ফ্যান্টের ব্যালকনির বাগানটি প্রজাপতি, মৌমাছি এবং বিভিন্ন ধরনের মাছি সহ নানা ধরণের পরাগরেণু বহনকারী পতঙ্গদের আকর্ষণ করে। শিকাগো বোটানিক গার্ডেনের গ্রিন রুফ (সবুজ ছাদ) প্রকল্পের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে, ফ্যান্ট এই ধারণাটি কন্টেইনার গার্ডেনিংয়ের জন্য ব্যবহার করেছেন। তিনি আবিষ্কার করেছেন যে ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতার ছোট গাছগুলি শহুরে পরিবেশে বাতাসের মধ্যে বেশি স্থিতিশীল থাকে। তিনি প্রায়শই প্রেইরি অঞ্চলের পরিবেশের অনুকরণে নিজস্ব মাটি মিশ্রণ তৈরি করতেন, যদিও তিনি মজা করে বলেন যে সাধারণ পটিং মিক্সও বেশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
তাঁর ব্যালকনিতে বসন্তের উজ্জ্বল ফ্লোক্স থেকে শুরু করে শরতের গোল্ডেন রড এবং অ্যাস্টার পর্যন্ত, এমনকি শীতকালে সেজেস (sedges) এর উপস্থিতি – সারা বছরই এক সজীব প্রদর্শনী দেখা যায়। ফ্যান্টের ব্যক্তিগত পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলি শহুরে স্থানগুলিতে জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি এবং গুরুত্বপূর্ণ পতঙ্গ জনসংখ্যাকে সমর্থন করার সম্ভাবনাকে তুলে ধরে।
ব্যালকনির বাইরেও, ফ্যান্ট শিকাগো বোটানিক গার্ডেনে দেশীয় উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও প্রচারের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বিভিন্ন উদ্যোগের তত্ত্বাবধান করেন। এর মধ্যে রয়েছে 'সিড অ্যামপ্লিফিকেশন প্রোগ্রাম' (Seed Amplification Program), যার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে স্থানীয় পুনরুদ্ধারের প্রকল্পগুলিতে সহায়তা করার জন্য দেশীয় বীজের বিশাল পরিমাণ উৎপাদন করা। শিকাগোর বাসিন্দাদের জন্য যারা নিজেদের দেশীয় বাগান তৈরি করতে আগ্রহী, শিকাগো বার্ড অ্যালায়েন্স ১লা জুন, ২০২৫ তারিখে একটি দেশীয় উদ্ভিদ বিক্রয়ের আয়োজন করেছিল। এই বিক্রয় অনুষ্ঠানে স্থানীয়ভাবে অভিযোজিত বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদগুলি পাওয়া যায়, যা দেশীয় বন্যপ্রাণীদের জন্য অপরিহার্য খাদ্য ও আশ্রয় প্রদান করে।
এই উদ্যোগগুলি শহুরে পরিবেশে প্রকৃতির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যা কেবল মানুষের জন্যই নয়, বরং অসংখ্য ক্ষুদ্র প্রাণীর জন্যও এক আশ্রয়স্থল তৈরি করেছে। শহুরে পরিবেশে দেশীয় উদ্ভিদের ব্যবহার কেবল সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে না, বরং এটি পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশীয় গাছপালা বায়ু পরিশোধনে সাহায্য করে, কার্বন শোষণ করে এবং জলবায়ু পরিবর্তনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। শিকাগোর মতো বড় শহরগুলিতে, যেখানে সবুজের অভাব প্রকট, সেখানে এই ধরনের ছোট ছোট উদ্যোগগুলিও জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং পরিবেশের উন্নতিতে বড় অবদান রাখতে পারে। এই প্রচেষ্টাগুলি প্রমাণ করে যে, সীমিত জায়গাতেও প্রকৃতির যত্ন নেওয়া এবং তাকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব।