দক্ষিণ উজবেকিস্তানের সুরখান্দারিয়া উপত্যকায় তোদা গুহায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে মধ্য এশিয়ায় কৃষির প্রাথমিক বিকাশের উপর এক নতুন আলোকপাত করা হয়েছে। ৯,২০০ বছরের পুরনো নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে কাঠকয়লা, পাথরের সরঞ্জাম এবং উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ। এই আবিষ্কারগুলি ইঙ্গিত দেয় যে গুহার বাসিন্দারা বন্য বার্লি, পেস্তা এবং আপেলের মতো খাদ্য সংগ্রহ করতেন, যা একটি জটিল জীবনধারণ পদ্ধতির পরিচায়ক।
পাথরের ব্লেড এবং ফ্ল্যাকগুলির ব্যবহার-ক্ষয় বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় যে সেগুলি কাস্তে বা কাটার সরঞ্জামের মতো ব্যবহৃত হত, যা বিশ্বজুড়ে পরিচিত কৃষি পদ্ধতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি কৃষির উৎপত্তির ঐতিহ্যবাহী ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে, যা এতদিন পর্যন্ত লেভান্টের নাটুফিয়ান সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল। তোদা গুহার প্রমাণগুলি ইঙ্গিত দেয় যে একই ধরনের কৃষি আচরণ বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাধীনভাবে বিকশিত হয়েছিল, যা মানব সমাজের বিবর্তনের এক বিস্তৃত চিত্র তুলে ধরে।
চীনের ইনস্টিটিউট অফ ভার্টিব্রেট প্যালিওন্টোলজি এবং প্যালিওঅ্যানথ্রোপোলজির সহ-লেখক জিনইং ঝোউ এই আবিষ্কারের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে বলেন, "এই আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের কাছে কৃষি-ভিত্তিক জীবনযাত্রার পরিবর্তনের ধারণাটিকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করবে, কারণ এটি দেখায় যে এই পরিবর্তনমূলক আচরণগুলি কতটা বিস্তৃত ছিল।" গবেষকরা মনে করেন যে এই উদ্ভিদগুলির গৃহপালন সম্ভবত মানুষের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছাড়াই ঘটেছিল।
ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অফ জিওঅ্যানথ্রোপোলজির সহ-লেখক রবার্ট স্পেংলার উল্লেখ করেছেন, "গৃহপালন প্রক্রিয়াটি মানুষের ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা ছাড়াই ঘটেছিল এমন ধারণাকে সমর্থন করে এমন গবেষণার একটি ক্রমবর্ধমান ধারা রয়েছে। এই গুহার সন্ধান সেই ধারণাকে আরও শক্তিশালী করে যে মানুষ কেবল খাদ্য সংগ্রহকারী থেকে কৃষিতে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় আচরণগুলি সময়ের সাথে সাথে বিকশিত করেছিল।" এই দৃষ্টিভঙ্গিটি কৃষির উৎপত্তির একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে, যেখানে মানবীয় প্রচেষ্টা পরিবেশের সাথে এক সামঞ্জস্যপূর্ণ মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে বিকশিত হয়েছিল।
উজবেকিস্তানের এই আবিষ্কারটি মধ্য এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ। যেমন, তুর্কমেনিস্তানের জেইতুন সংস্কৃতিতে প্রাপ্ত প্রমাণগুলিও প্রাথমিক কৃষিকাজের ইঙ্গিত দেয়। এই নতুন তথ্যগুলি কৃষির উৎপত্তির বহু কেন্দ্রিকতার ধারণাকে আরও দৃঢ় করে। গবেষকরা ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে আরও সমীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা করছেন, যাতে এই প্রাচীন কৃষি পদ্ধতির বিস্তার এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত মানবীয় বিবর্তনের ধারা সম্পর্কে আরও গভীর জ্ঞান লাভ করা যায়।