রাজস্থানের জয়সলমীরে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার ভারতের জীবাশ্ম গবেষণার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। জয়নারায়ণ ব্যাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভি.এস. পরিহারের নেতৃত্বে একটি দল প্রায় ২০.১৪ কোটি বছরের পুরনো এক ফাইটোসর (Phytosaur) প্রজাতির জীবাশ্ম উদ্ধার করেছে। এই আবিষ্কারটি ভারতের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটিই প্রথম ফাইটোসর জীবাশ্ম যা দেশের মাটিতে, বিশেষ করে জুরাসিক যুগের শিলাস্তরে পাওয়া গেছে।
ফাইটোসর ছিল কুমিরের মতো দেখতে এক প্রাচীন সরীসৃপ, যারা ডাইনোসরদের সমসাময়িক ছিল এবং জুরাসিক যুগে বনভূমি ও নদী তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করত। আবিষ্কৃত জীবাশ্মটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৫ থেকে ২ মিটার, যা একটি মাঝারি আকারের ফাইটোসরকে নির্দেশ করে। এই জীবাশ্মের পাশেই একটি ডিমের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা এই প্রাণীর প্রজনন আচরণ সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করতে পারে। ফাইটোসররা পার্মিয়ান-ট্রায়াসিক গণবিলুপ্তির ঘটনা থেকেও টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছিল, যা তাদের অভিযোজন ক্ষমতার প্রমাণ দেয়।
জয়সলমীর বেসিনের লাঠি ফর্মেশনের অন্তর্গত এই জীবাশ্মগুলি প্রারম্ভিক জুরাসিক যুগের। ভূতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে জানা যায় যে এই সরীসৃপগুলি মূলত মাছ খেত এবং প্রাচীন নদী বাস্তুতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। সিনিয়র ভূতত্ত্ববিদ নারায়ণ দাস ইনখিয়া এই খননকার্যের তত্ত্বাবধান করেছেন এবং তিনি এই স্থানটিকে আরও অনেক প্রাচীন প্রাণীর অবশেষ, এমনকি উড়ন্ত তৃণভোজী ডাইনোসরের জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনাময় বলেও উল্লেখ করেছেন।
এই আবিষ্কার জয়সলমীর অঞ্চলে ভূ-পর্যটনের প্রসারেও সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ডঃ ইনখিয়া এই অঞ্চলটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার সম্ভাবনার কথা বলেছেন, যেখানে মূল জীবাশ্ম ছাড়াও শিকড়ের জীবাশ্ম এবং অন্যান্য ডাইনোসর সংক্রান্ত নিদর্শন রয়েছে যা সংরক্ষণ ও গবেষণার দাবি রাখে। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যকে রক্ষা করার জন্য, জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যেই খননস্থলটিকে বেড়া দিয়ে ঘিরে দিয়েছে। এই পদক্ষেপটি ভবিষ্যতের গবেষণার জন্য জীবাশ্মের ভান্ডার সংরক্ষণ নিশ্চিত করবে। এই যুগান্তকারী আবিষ্কার কেবল বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকেই সমৃদ্ধ করবে না, বরং জয়সলমীরকে ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা এবং ভূ-পর্যটনের একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।