সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভারত মহাসাগরের কেন্দ্রীয় অংশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১৯৫৯ সাল থেকে ত্বরান্বিত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুরের (NUS) ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক পল কেনচের নেতৃত্বে এই গবেষণাটি মালদ্বীপের হুভাদু অ্যাটলে আবিষ্কৃত এক শতাব্দীর পুরনো কোরাল জীবাশ্ম, যা মাইক্রোঅ্যাটল নামে পরিচিত, ব্যবহার করেছে। মাইক্রোঅ্যাটল হল এক ধরণের বিশেষ সামুদ্রিক প্রবাল যা অনুভূমিকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং এর কঙ্কালের স্তরে বার্ষিক সমুদ্রপৃষ্ঠের পরিবর্তন রেকর্ড করে, অনেকটা গাছের বলয়গুলির মতো।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৩০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ভারত মহাসাগরের কেন্দ্রীয় অংশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৩০ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্ঠের বার্ষিক বৃদ্ধির হার ছিল ১.৪২ মিমি, যা ১৯৫৯ সাল থেকে প্রতি বছর ৩.৪৪ মিমি-তে ত্বরান্বিত হয়েছে। ১৯৯২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে এই হার আরও বেড়ে প্রতি বছর ৪.৩৯ মিমি হয়েছে। এই ফলাফলগুলি নির্দেশ করে যে ভারত মহাসাগর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি দ্রুত সাড়া দিয়েছে, গত সাত দশকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে।
এই ত্বরান্বিত বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং বায়ুর গতিপথের পরিবর্তনকে দায়ী করা হচ্ছে। এই কারণগুলো সমুদ্রের তাপ শোষণ এবং তাপীয় প্রসারণ বৃদ্ধি করেছে। এই প্রেক্ষাপটে, সিঙ্গাপুর তার উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২০০৮ সালে নির্মিত মেরিনা ব্যারেজ বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং জল সরবরাহের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো হিসেবে কাজ করছে। দেশটি প্রকৌশল সমাধান এবং প্রকৃতি-ভিত্তিক উন্নত পদ্ধতির সমন্বয়ে তার উপকূলরেখা রক্ষার জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।
কোরাল জীবাশ্মের রেকর্ড দ্বারা প্রমাণিত ভারত মহাসাগরের ত্বরান্বিত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং অভিযোজন কৌশলগুলির জরুরি প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। উপকূলীয় সম্প্রদায় এবং বাস্তুতন্ত্রের জন্য চলমান গবেষণা এবং সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য।