ভারতীয় বিজ্ঞানীরা প্রায় ৩৪ মিলিয়ন বছর আগে অ্যান্টার্কটিকার বরফ যুগের সূচনা এবং ভারতীয় মৌসুমী বায়ুর প্রাথমিক বিবর্তনের মধ্যে একটি গভীর সংযোগ স্থাপন করেছেন। নাগাল্যান্ডে প্রাপ্ত জীবাশ্ম পাতা এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের উৎস। লখনউয়ের বীরবল সাহনি ইনস্টিটিউট অফ প্যালিওসায়েন্সেস এবং দেরাদুনের ওয়াডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হিমালয়ান জিওলজির গবেষকরা জলবায়ু পুনর্গঠন কৌশল ব্যবহার করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে যে নাগাল্যান্ডের লাইসং ফরমেশন সেই প্রাচীনকালে অত্যন্ত উচ্চ বৃষ্টিপাত এবং উষ্ণ আবহাওয়ার সাক্ষী ছিল।
গুরুত্বপূর্ণভাবে, এই জীবাশ্ম পাতাগুলির বয়স অ্যান্টার্কটিকার বিশাল বরফ চাদর তৈরির সময়ের সাথে মিলে যায়। এটি একটি বিশ্বব্যাপী সংযোগের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে অ্যান্টার্কটিকার বরফের বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী বায়ু এবং বৃষ্টিপাতের ধরণ পরিবর্তন করেছিল। মনে করা হয় যে এই পরিবর্তনের ফলে ইন্টারট্রপিকাল কনভারজেন্স জোন (ITCZ) ক্রান্তীয় অঞ্চলের দিকে সরে গিয়েছিল, যা উত্তর-পূর্ব ভারতে তীব্র মৌসুমী বৃষ্টিপাতের সূচনা করেছিল। এই গবেষণাটি 'প্যালিওজিওগ্রাফি, প্যালিওক্লাইমেটোলজি, প্যালিওইকোলজি' জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং এতে ক্লাইমেট লিফ অ্যানালাইসিস মাল্টিভেরিয়েট প্রোগ্রাম (CLAMP) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, যা জীবাশ্ম পাতার আকার, আকৃতি এবং গঠন বিশ্লেষণ করে।
ফলাফলগুলি ইঙ্গিত দেয় যে সেই সময়ে নাগাল্যান্ডের জলবায়ু আজকের তুলনায় অনেক বেশি আর্দ্র এবং উষ্ণ ছিল, যা অ্যান্টার্কটিকার হিমবাহের কারণে সৃষ্ট বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই প্রাচীন কাহিনি বর্তমানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা বহন করে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলে যাওয়ার সাথে সাথে ITCZ আবার স্থানান্তরিত হতে পারে, যা ক্রান্তীয় অঞ্চলের মৌসুমী বায়ুর ধরণকে ব্যাহত করতে পারে। এই পরিবর্তনগুলি ভারতের জন্য সুদূরপ্রসারী পরিণতি ডেকে আনতে পারে, কারণ মৌসুমী বায়ু এখানকার কৃষিকাজ, জল সুরক্ষা এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনযাত্রার জন্য অপরিহার্য। এই গবেষণা পৃথিবীর জলবায়ু ব্যবস্থার বিশ্বব্যাপী আন্তঃসংযোগকে তুলে ধরে। গবেষকরা জোর দিয়েছেন যে অতীতের জলবায়ু পরিবর্তনের অধ্যয়ন ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়ক।