সাম্প্রতিক গবেষণায় দ্বাদশ ও চতুর্দশ শতাব্দীর আরবি সাহিত্যকর্মের গভীর বিশ্লেষণ করে দুটি গুরুত্বপূর্ণ মহাজাগতিক ঘটনার নতুন বিবরণ সামনে এসেছে, যা পূর্বে এই প্রেক্ষাপটে অজানা ছিল। এই আবিষ্কারগুলি মধ্যযুগীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ক্ষণস্থায়ী মহাজাগতিক ঘটনা নথিভুক্ত করার উন্নত ক্ষমতাকে তুলে ধরে, যা সময়ের প্রবাহের সাথে সাথে আমাদের উপলব্ধিকে প্রসারিত করে।
দ্বাদশ শতাব্দীর আরব কবি ইবনে সানা আল-মুলকের একটি কবিতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা ১১৮১ খ্রিস্টাব্দের সুপারনোভা বিস্ফোরণকে বর্ণনা করে বলে মনে করা হচ্ছে। এই কবিতাটি সুলতান সালাহউদ্দিনকে উৎসর্গীকৃত এবং এতে আকাশের এক 'নজ্ম' বা নতুন তারার আবির্ভাবের ইঙ্গিত রয়েছে। ধারণা করা হয়, এই ঘটনাটি ১১৮১ থেকে ১১৮২ সালের মধ্যে ঘটেছিল, যখন সালাহউদ্দিন এবং তাঁর ভাই কায়রোতে অবস্থান করছিলেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, এই সুপারনোভাটি ক্যাসিওপিয়া নক্ষত্রমণ্ডলে দৃশ্যমান ছিল এবং এর উজ্জ্বলতা ছিল প্রায় শূন্য মাত্রার কাছাকাছি, যা খালি চোখে সহজে দৃশ্যমান হওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। আরব জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই সময়কালে এটিকে 'আল-কাফ আল-খাদিব' বা 'হেনা-রঙা হাত' নক্ষত্রমণ্ডলের কাছাকাছি দেখেছিলেন।
অন্যদিকে, চতুর্দশ শতাব্দীর ঐতিহাসিক আহমদ ইবনে আলী আল-মাকরিজি একটি ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন যা ১০0৬ খ্রিস্টাব্দের সুপারনোভা (SN 1006) এর সাথে মিলে যায়। আল-মাকরিজি এমন একটি 'কওকাব' বা তারার বর্ণনা দিয়েছেন যার লেজ ছিল এবং তা চাঁদের মতোই উজ্জ্বলভাবে জ্বলত এবং আবু রাকওয়ার বিদ্রোহের সময়কালে কয়েক মাস ধরে স্থায়ী হয়েছিল। এই বর্ণনাটি সুপারনোভা ১০0৬-এর বৈশিষ্ট্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা এতটাই উজ্জ্বল ছিল যে দিনের বেলায়ও এটিকে দেখা যেত। জ্যোতির্পদার্থবিদদের মতে, SN 1006 সম্ভবত দুটি শ্বেত বামন তারার সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট একটি টাইপ Ia সুপারনোভা ছিল।
এই আরবি বিবরণগুলি কেবল অতীতের মহাজাগতিক বিস্ময়কে নিশ্চিত করে না, বরং এই ঘটনাগুলির নতুন মাত্রা যোগ করে। উদাহরণস্বরূপ, ১০0৬ সালের সুপারনোভা সম্পর্কে পারস্য পণ্ডিত ইবনে সিনার (Avicenna) লেখায় এর রঙের বিবর্তন—প্রথমদিকে সবুজ থেকে সাদার দিকে পরিবর্তন—নথিভুক্ত আছে, যা পূর্বে অন্য কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়নি। এই ধরনের বিস্তারিত পর্যবেক্ষণগুলি মহাজাগতিক ঘটনার প্রকৃতি এবং তার বিবর্তন বোঝার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এই প্রাচীন নথিগুলি প্রমাণ করে যে, মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করলে অতীতের রহস্যের পর্দা সরে যায়, যা বর্তমানের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে।