মরক্কোতে আবিষ্কৃত স্পিকোমেলাস অ্যাফার: বিশ্বের প্রাচীনতম অ্যানকিলোসর যার ছিল অনন্য কাঁটাযুক্ত বর্ম

সম্পাদনা করেছেন: Tetiana Martynovska 17

জীবাশ্মবিদরা মরক্কোর মধ্য জুরাসিক যুগের পাললিক শিলা থেকে স্পিকোমেলাস অ্যাফার (Spicomellus afer) নামে পরিচিত বিশ্বের প্রাচীনতম অ্যানকিলোসর আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। এই ডাইনোসরটি প্রায় ১৬৫ মিলিয়ন বছর আগে বাস করত এবং এর অসাধারণ কাঁটাযুক্ত বর্মের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। নতুন আবিষ্কৃত জীবাশ্মগুলি নিশ্চিত করেছে যে স্পিকোমেলাস-এর পুরো কঙ্কালটিই ছিল কাঁটায় ঢাকা, যার মধ্যে কিছু কাঁটা হাড়ের সাথে সংযুক্ত ছিল এবং প্রায় এক মিটার পর্যন্ত লম্বা ছিল।

স্পিকোমেলাস অ্যাফার প্রায় ১৩ ফুট (৪ মিটার) লম্বা এবং দুই টন পর্যন্ত ওজনের ছিল। এর পাঁজরের হাড় থেকে বেরিয়ে আসা লম্বা কাঁটা এবং ঘাড়ের চারপাশে থাকা কাঁটার কলার একে অনন্যতা দিয়েছে। আটলান্টিক পর্বতমালার কাছে বৌলেমান অঞ্চলের শিলাস্তরে পাওয়া জীবাশ্মগুলি থেকে জানা যায় যে, স্পিকোমেলাস-এর ঘাড়ের চারপাশে প্লেট এবং দুটি কাঁটার মতো অংশ ছিল, যার মধ্যে একটি প্রায় ৮৭ সেন্টিমিটার (৩৪ ইঞ্চি) লম্বা ছিল। এর পিঠও কাঁটায় ঢাকা ছিল এবং নিতম্বের উপরে দুটি বড় কাঁটা বাইরের দিকে প্রসারিত ছিল।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই জমকালো বর্ম আত্মরক্ষার পাশাপাশি সঙ্গীকে আকৃষ্ট করার জন্যও ব্যবহৃত হত। বিশেষ করে, এক মিটার লম্বা ঘাড়ের কাঁটাগুলি আত্মরক্ষার জন্য তেমন উপযোগী ছিল না, যা গবেষকদের ধারণা এইগুলি সঙ্গীর জন্য বা নিজেদের এলাকা প্রদর্শনের জন্য বিবর্তিত হয়েছিল। এছাড়াও, স্পিকোমেলাস-এর লেজের মেরুদণ্ডের হাড়গুলি একত্রিত হয়ে একটি কাঠামোর সৃষ্টি করেছে, যা থেকে বোঝা যায় যে এর লেজে একটি অস্ত্র ছিল, যেমন একটি ক্লাব বা কাঁটা। এটি ইঙ্গিত দেয় যে অ্যানকিলোসরদের মধ্যে লেজের অস্ত্র প্রায় ৩০ মিলিয়ন বছর আগে থেকেই প্রচলিত ছিল, যা পূর্বে জানা সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।

এই আবিষ্কারটি প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে যে, আদি অ্যানকিলোসরদের শারীরিক গঠন সরল ছিল। এটি প্রমাণ করে যে, সবচেয়ে জটিল প্রতিরক্ষামূলক বর্মগুলি এই গোষ্ঠীর ইতিহাসে খুব তাড়াতাড়ি বিকশিত হয়েছিল। স্পিকোমেলাস, অ্যাঙ্কিলোসর এবং অন্যান্য পরিচিত ভারী বর্মযুক্ত প্রজাতি যেমন অ্যাঙ্কিলোসরস-এর চেয়েও প্রাচীন। এটি ডাইনোসরের বর্মের প্রাথমিক বিবর্তন সম্পর্কে নতুন ধারণা প্রদান করে।

প্রকৃতি (Nature) জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাটি লন্ডন ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়াম এবং বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুসান্না মেইডমেন্ট এবং বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড বাটলার যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন। মরক্কোর ড্রেসেলের শিক্ষক প্রফেসর ডরিস ওয়ারহাচে এই গবেষণার সহ-লেখক হিসেবে বলেছেন, “এই গবেষণা মরক্কোর বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করছে। আমরা আগে কখনো এমন ডাইনোসর দেখিনি, এবং এই অঞ্চলটি আরও অনেক কিছু দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।” এই আবিষ্কার মরক্কোর সমৃদ্ধ জীবাশ্ম ঐতিহ্যের উপর আলোকপাত করার পাশাপাশি অ্যানকিলোসরদের বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।

উৎসসমূহ

  • Internewscast Journal

  • Natural History Museum

  • Reuters

  • ABC News

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।