মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের গবেষকদের একটি যৌথ দল মঙ্গল গ্রহের কেন্দ্রে একটি কঠিন অভ্যন্তরীণ কোর (solid inner core) থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এই যুগান্তকারী আবিষ্কারটি গ্রহটির অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে এতদিনকার প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। নাসার ইনসাইট ল্যান্ডার (InSight lander) থেকে প্রাপ্ত সিসমিক ডেটা (seismic data) বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।
গবেষকদের মতে, মঙ্গল গ্রহের এই কঠিন অভ্যন্তরীণ কোরটির ব্যাসার্ধ প্রায় ৬০০ কিলোমিটার, যা গ্রহটির মোট ব্যাসার্ধের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। এই গঠন পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কাঠামোর সাথে উল্লেখযোগ্যভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। এই গবেষণাটি নেচার (Nature) জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। মঙ্গল গ্রহের এই কঠিন অভ্যন্তরীণ কোরটি লোহা এবং নিকেলের সমন্বয়ে গঠিত এবং এতে প্রায় ১২% থেকে ১৬% সালফার, ৬.৭% থেকে ৯% অক্সিজেন এবং সর্বোচ্চ ৩.৮% কার্বন থাকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
এই আবিষ্কারটি ইঙ্গিত দেয় যে মঙ্গল গ্রহও পৃথিবীর মতো একটি শীতলীকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছে, যা সম্ভবত কোরের কেলাসীকরণে (core crystallization) অবদান রেখেছে। তবে, মঙ্গল গ্রহে একটি বিশ্বব্যাপী চৌম্বক ক্ষেত্রের (global magnetic field) অনুপস্থিতি একটি প্রশ্ন উত্থাপন করে যে, এই ধরনের কোর কাঠামো থাকা সত্ত্বেও এটি কীভাবে একটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করতে পারত। বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন যে, মঙ্গল গ্রহের অভ্যন্তরীণ কোরের উপাদানের সংমিশ্রণ পৃথিবীর কোরের উপাদানের সাথে তুলনীয়।
এই নতুন তথ্য মঙ্গল গ্রহের বিবর্তন এবং এর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস বোঝার ক্ষেত্রে গভীর তাৎপর্য বহন করে। এটি পরামর্শ দেয় যে, মঙ্গল গ্রহ পূর্বে আমরা যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশি গতিশীল ছিল। ইনসাইট মিশনের সিসমোমিটার মঙ্গল গ্রহের অসংখ্য কম্পন রেকর্ড করেছে, যা গ্রহটির ভূতাত্ত্বিক কার্যকলাপ এবং অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছে। একটি কঠিন অভ্যন্তরীণ কোরের আবিষ্কার এই মিশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই গবেষণাটি গ্রহ বিজ্ঞান (planetary science) ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন, যা অন্যান্য পার্থিব গ্রহগুলির (terrestrial planets) অভ্যন্তরীণ কাঠামোর সাথে তুলনামূলক অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন যে, এই আবিষ্কার মঙ্গল গ্রহের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস এবং এর বিবর্তন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য উন্মোচন করতে সহায়ক হবে। এটি মঙ্গল গ্রহের চৌম্বকীয় ইতিহাস এবং এর বিলুপ্তির কারণ অনুসন্ধানেও নতুন দিক উন্মোচন করেছে, যা অতীতে গ্রহটিকে আরও বাসযোগ্য করে তুলতে পারত।