নরওয়ের অসলোর ভিয়োরিকা (Bjørvika) অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য চালানোর সময় ১৩শ ও ১৪শ শতাব্দীর প্রায় তিন হাজারেরও বেশি চামড়ার সামগ্রী আবিষ্কৃত হয়েছে। নরওয়েজিয়ান মেরিটাইম মিউজিয়াম (Norwegian Maritime Museum) এবং নরওয়েজিয়ান ইনস্টিটিউট ফর কালচারাল হেরিটেজ রিসার্চ (Norwegian Institute for Cultural Heritage Research)-এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এই খননকার্যে প্রাপ্ত সামগ্রীগুলি সেই সময়ের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, ফ্যাশন এবং কারুশিল্প সম্পর্কে এক বিরল অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।
এই আবিষ্কারের মধ্যে প্রায় ২৩০ জোড়া জুতো রয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলোই শিশুদের আকারের। এই জুতো গুলো সাধারণ নকশা থেকে শুরু করে লম্বা বুট পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের শৈলীর পরিচয় দেয়। এগুলি কেবল ব্যবহারিক প্রয়োজনেই নয়, বরং সেই সময়ের মানুষের রুচি ও সামাজিক অবস্থানেরও প্রতিফলন ঘটায়। চামড়ার তৈরি ২০টিরও বেশি ব্যাগ ও পার্স পাওয়া গেছে, যা পকেটবিহীন মধ্যযুগীয় পোশাকের অপরিহার্য অংশ ছিল। এছাড়াও, তলোয়ার ও ছুরির খাপ, যার কিছু সজ্জিত, তাও আবিষ্কৃত হয়েছে, যা সেই সময়ের মানুষের জীবনযাত্রায় ছুরি-তলোয়ারের গুরুত্ব নির্দেশ করে।
এই প্রত্নবস্তুগুলি আলনা নদীর (Alna River) কাছে ফেলে দেওয়া আবর্জনার স্তূপ থেকে এসেছিল বলে মনে করা হয়। সময়ের সাথে সাথে, বিশেষ করে বসন্তকালের বন্যা, এই আবর্জনাগুলিকে নদীর মাধ্যমে বহন করে বর্তমান খননস্থলে এনে জমা করেছে। এখানকার জলমগ্ন এবং কাদামাটি সমৃদ্ধ পরিবেশ চামড়ার মতো জৈব সামগ্রীগুলিকে প্রায় ৭০০ বছর ধরে আশ্চর্যজনকভাবে সংরক্ষণ করেছে।
এই আবিষ্কারগুলি অসলোর মধ্যযুগীয় বন্দর এলাকার জীবনযাত্রা এবং সেই সময়ের বাণিজ্য ও সংস্কৃতির উপর আলোকপাত করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই চামড়ার সামগ্রীগুলি, বিশেষ করে জুতো, বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়েছে এবং বারবার মেরামত করা হয়েছে, যা সেই সময়ে জিনিসপত্রের প্রতি মানুষের যত্ন ও মূল্যবোধের পরিচয় দেয়। শিশুদের জুতো আবিষ্কার মধ্যযুগীয় শৈশব ও পারিবারিক জীবন সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে। এই নিদর্শনগুলি সেই সময়ের মানুষের জীবনযাত্রার একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরে, যা কেবল ঐতিহাসিক তথ্যের ভান্ডারই নয়, বরং অতীতের মানুষের সাথে একাত্মতা বোধেরও সুযোগ করে দেয়।