খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর ব্যাবিলনীয় মৃৎফলক ‘ইমাজো মুন্ডি’ প্রাচীন মেসোপটেমীয়দের বিশ্বদর্শন ও মহাজাগতিক ধারণার এক অমূল্য দলিল বহন করে। এই গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনটি আধুনিক ইরাকের আবু হাব্বা (প্রাচীন সিপ্পার) শহরে আবিষ্কৃত হয়েছিল এবং ১৮৮২ সালে এটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামের সংগ্রহে স্থানান্তরিত হয়। ফলকটির পরিমাপ প্রায় ৪.৮ ইঞ্চি লম্বা এবং ৩.২ ইঞ্চি চওড়া। এই মানচিত্রটি কেবল ভৌগোলিক চিত্রণ নয়, বরং ব্যাবিলনীয় ধর্মীয় বিশ্বাস এবং পৌরাণিক কাহিনীর এক সম্মিলিত প্রতিফলন।
ফলকটির কেন্দ্রে বৃত্তাকার নকশায় মেসোপটেমিয়াকে স্থাপন করা হয়েছে, যা তাদের কাছে বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। এই কেন্দ্রকে ঘিরে রয়েছে ‘তিক্ত নদী’ বা ‘বিটার রিভার’ নামে পরিচিত একটি দ্বৈত বলয়, যা সেই সময়ের জ্ঞাত বিশ্বের সীমা নির্দেশ করত। ফলকের শিলালিপিগুলিতে পৃথিবীর সৃষ্টি এবং মেসোপটেমিয়ার বাইরের অঞ্চল ও জনগোষ্ঠীর বিবরণ পাওয়া যায়। এতে সৃষ্টিকর্তা দেবতা মারডুক এবং বৃশ্চিক-মানব ও সিংহ-মাথাওয়ালা পাখি আঞ্জু-এর মতো কাল্পনিক প্রাণীর উপস্থিতি ব্যাবিলনীয়দের জটিল চিন্তাধারা ও কল্পনাশক্তির পরিচয় দেয়।
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হলো, এই ফলকের লেখায় নোহের সিন্দুকের গল্পের ব্যাবিলনীয় সংস্করণটি রয়েছে, যেখানে নায়কের নাম উতনপিশ্তিম (Utnapishtim)। ব্রিটিশ মিউজিয়ামের কিউনিফর্ম বিশেষজ্ঞ ডঃ আরভিং ফিঙ্কেল উল্লেখ করেছেন যে, ব্যাবিলনীয় বিশ্বাস অনুযায়ী উতনপিশ্তিমের সিন্দুক তিক্ত নদীর ওপারে একটি পর্বতে অবতরণ করেছিল। এই বিবরণ প্রমাণ করে যে প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতিগুলিতে একটি মহাপ্রলয়ের সাধারণ স্মৃতি প্রচলিত ছিল, যা এই ভঙ্গুর মৃৎফলকে অমরত্ব লাভ করেছে।
ফলকের পিছনের অংশে থাকা লেখায় আটটি বহির্দেশীয় অঞ্চল বা ‘নাগু’ (nagu)-এর বর্ণনা রয়েছে, যা রহস্যময় ও জাদুকরী স্থান হিসেবে চিত্রিত। গবেষকদের মতে, এই নিদর্শনটি কেবল দিকনির্দেশনার মাধ্যম ছিল না, বরং এটি ব্যাবিলনীয় শাসকদের কেবল ভূমির উপর নয়, বরং মহাজাগতিক শক্তির উপরও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার একটি ধর্মতাত্ত্বিক বিবৃতি হতে পারে। এই আবিষ্কার প্রাচীন বিশ্বের মানচিত্রাঙ্কন ও মহাজাগতিক ধারণার এক গভীর সংযোগকে তুলে ধরে।