অ্যান্টার্কটিকার রহস্যময় পিরামিড: ভূতাত্ত্বিক ক্ষয় প্রক্রিয়ার এক বিস্ময়কর প্রকাশ

সম্পাদনা করেছেন: Tetiana Martynovska 17

অ্যান্টার্কটিকার এলসওয়ার্থ পর্বতমালার বুকে দৃশ্যমান এক পিরামিড-আকৃতির কাঠামোকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক জল্পনা সৃষ্টি হয়েছিল। এই কাঠামোটিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন সভ্যতা বা ভিনগ্রহী কার্যকলাপের মতো নানা ধারণা মানুষের মনে দানা বাঁধতে শুরু করে। তবে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান এই রহস্যের পর্দা সরিয়ে দিয়েছে এবং স্পষ্ট করেছে যে এটি আসলে প্রকৃতির নিজস্ব হাতে গড়া এক অসাধারণ ভূতাত্ত্বিক সৃষ্টি।

এই রহস্যময় গঠনটি অ্যান্টার্কটিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট ভিনসন মসিফের নিকটবর্তী এলসওয়ার্থ পর্বতমালায় অবস্থিত। এই জল্পনা শুরু হয়েছিল মূলত ২০১৬ সালে, যখন উপগ্রহ চিত্রগুলিতে এর সুষম পিরামিডীয় রূপটি ধরা পড়ে। ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা সর্বসম্মতভাবে এই আকৃতির উৎস হিসেবে প্রাকৃতিক ক্ষয় প্রক্রিয়াকে চিহ্নিত করেছেন। মেরু অঞ্চলে প্রচলিত 'হিমায়ন-গলন ক্ষয়' (freeze-thaw erosion) নামক প্রক্রিয়া লক্ষ লক্ষ বছর ধরে পাথরকে খোদাই করে এই জ্যামিতিক রূপটি তৈরি করেছে। এই ধরনের প্রাকৃতিক গঠন বিশ্বজুড়ে পরিচিত, যেমন আল্পস পর্বতমালার ম্যাটারহর্ন।

ভূতাত্ত্বিক পরিভাষায়, এই ধরনের পর্বতশৃঙ্গ যা বরফের চাদর বা হিমবাহের উপর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে, সেগুলিকে 'নুনাটক' বলা হয়। 'নুনাটক' শব্দটি ইনুইট ভাষা থেকে এসেছে, যার অর্থ 'একাকী চূড়া'। এই নুনাটকগুলি কেবল অ্যান্টার্কটিকাতেই নয়, গ্রিনল্যান্ড এবং হিমালয়, আন্দিজের মতো উচ্চ হিমবাহ-আচ্ছাদিত অঞ্চলেও দেখা যায়। এই বিচ্ছিন্ন চূড়াগুলি হিমবাহের চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন বহন করে।

এলসওয়ার্থ পর্বতমালার অংশ মাউন্ট ভিনসন মসিফটি ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৩ কিলোমিটার প্রশস্ত। এই অঞ্চলের পর্বতগুলি কোটি কোটি বছর আগে টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ এবং মহাদেশীয় ফাটলের মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল। যদিও এই কাঠামোটি কৃত্রিম নয়, এর সৃষ্টি প্রক্রিয়া মানব ইতিহাসের চেয়েও প্রাচীন এবং বিশাল সময়ের ব্যাপ্তিতে বিস্তৃত। এই নুনাটকগুলি হিমবাহের সময়কালে উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করতে পারত এবং কিছু ক্ষেত্রে হাজার ফুটেরও বেশি উঁচু হতে পারে।

সুতরাং, অ্যান্টার্কটিকার কথিত 'পিরামিড' আসলে একটি প্রাকৃতিক ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য, যা কোটি কোটি বছর ধরে ক্ষয়কারী শক্তির দ্বারা আকার লাভ করেছে। এই আবিষ্কার আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে পৃথিবীর বুকে এমন অনেক বিস্ময় লুকিয়ে আছে, যা কেবল প্রকৃতির বিশালতা এবং সময়ের গভীরতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল দৃষ্টিতেই অনুধাবন করা সম্ভব। এই ধরনের প্রাকৃতিক নিদর্শনগুলি পৃথিবীর হিমবাহ সংক্রান্ত ইতিহাস এবং পরিবেশগত গতিশীলতা বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে।

উৎসসমূহ

  • okdiario.com

  • Deutsche Welle

  • El Confidencial

  • Canal 13

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।

অ্যান্টার্কটিকার রহস্যময় পিরামিড: ভূতাত্ত্... | Gaya One