পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার বরফের নিচে সুপ্ত গাম্বার্টসেভ পর্বতমালা: প্রাচীন রহস্যের নতুন উন্মোচন

সম্পাদনা করেছেন: Uliana S.

পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার সুবিশাল বরফের আস্তরণের প্রায় ১,২০০ কিলোমিটার গভীরে লুকিয়ে আছে গাম্বার্টসেভ পর্বতমালা, যা পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী। এই পর্বতশ্রেণীটি প্রায় ১,২০০ কিলোমিটার বিস্তৃত এবং এর সর্বোচ্চ চূড়াগুলি ৩,৩৯০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় পৌঁছায়। এই বিশাল ভূখণ্ডটি প্রায় ৫০ কোটি বছর পূর্বে গন্ডোয়ানা মহাদেশ গঠনের সময়কার মহাদেশীয় সংঘর্ষের ফলস্বরূপ সৃষ্টি হয়েছিল, যার ফলে ভূত্বকের এক গভীর অংশ বায়ুমণ্ডল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সংরক্ষিত হয়েছে। এই সুপ্ত ভূদৃশ্যকে ম্যাপ করার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় এজিএপি (AGAP) প্রকল্পটি পরিচালিত হয়, যেখানে বরফ-ভেদক রাডার ব্যবহার করা হয়েছিল। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর সুদূর অতীতের ভূ-গঠন সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য লাভ করেছেন। এই পর্বতমালাটি ১৯৫৮ সালে প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল আন্তর্জাতিক ভূ-পদার্থবিদ্যা বর্ষের সময়, কিন্তু এর উৎপত্তির রহস্য তখনো অমীমাংসিত ছিল।

এই গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে গাম্বার্টসেভ পর্বতমালায় আল্পসের মতো অপেক্ষাকৃত নবীন ভূ-প্রকৃতি রয়েছে এবং এটি উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়নি। এজিএপি প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর বহু-জাতীয় অংশগ্রহণ, যেখানে যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং চীন সহ বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং সহায়ক কর্মীরা একত্রিত হয়েছিলেন। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল পর্বতশ্রেণীর টেকটোনিক উৎস সঠিকভাবে চিহ্নিত করা, বরফের নিচের হ্রদ এবং আচ্ছাদনের সাথে এর সংযোগ বোঝা এবং অ্যান্টার্কটিকার প্রাচীনতম বরফ ও জলবায়ু রেকর্ডের অবস্থান নির্ণয় করা। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রায় ৩৫ মিলিয়ন বছর আগে যখন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পূর্ব অ্যান্টার্কটিক বরফের চাদর গঠিত হতে শুরু করে, তখন এই পর্বতমালা ছিল এর প্রাথমিক কেন্দ্রবিন্দু।

বিজ্ঞানীরা বরফের নিচে থাকা জলের গতিবিধি এবং বরফের চাদরের নিচের হ্রদগুলির জটিল ব্যবস্থা বোঝার চেষ্টা করেছেন, যা বরফের চাদরকে পিচ্ছিল করে এর গতিকে প্রভাবিত করতে পারে। এই পর্বতমালা পৃথিবীর বৃহত্তম বরফের চাদরের জন্মস্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। এই বিশাল ও উঁচু পর্বতশ্রেণী বরফের নিচে সংরক্ষিত থাকাটা খুবই অস্বাভাবিক, কারণ লক্ষ লক্ষ বছর ধরে জল ও বরফের ক্ষয়ের ফলে সাধারণত কেবল ছোট পাহাড় বা ঢেউ খেলানো ভূখণ্ড অবশিষ্ট থাকার কথা।

এই অনুসন্ধানের মাধ্যমে আমরা কেবল পৃথিবীর অতীতকেই নয়, বর্তমানের পরিবেশগত গতিপ্রকৃতিকেও গভীরভাবে অনুধাবন করার সুযোগ পাচ্ছি। এই সুপ্ত জগৎের রহস্য উন্মোচন আমাদের গ্রহের স্থিতিশীলতা এবং ভবিষ্যতের জলবায়ু পরিবর্তনের পূর্বাভাস বুঝতে সহায়ক হবে। এই জ্ঞান আমাদের নিজেদের অবস্থান এবং এই গ্রহের সাথে আমাদের নিবিড় সংযোগের প্রতি এক গভীর উপলব্ধি জাগিয়ে তোলে, যা আমাদের বর্তমান পদক্ষেপগুলির গুরুত্বকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।

উৎসসমূহ

  • Con La Gente Noticias

  • Britannica

  • Phys.org

  • SpaceNews

  • National Geographic

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।