অ্যান্টার্কটিকার পথে চীনের ৪২তম অভিযান: প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত উন্মোচন
সম্পাদনা করেছেন: Uliana S.
২০২৫ সালের নভেম্বরের প্রথম দিনে, চীনের ৪২তম অ্যান্টার্কটিক অভিযান সাংহাই থেকে যাত্রা শুরু করেছে, যা মেরু অঞ্চলের অপারেশনে নতুন মাত্রা যোগ করার এক সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ। এই অভিযান কেবল একটি ভ্রমণ নয়, বরং উন্নত প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত, যা ভবিষ্যতের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের পথ প্রশস্ত করবে। এই যাত্রার মূল চালিকাশক্তি হলো চীনের নিজস্ব উদ্ভাবনী শক্তি, যা কঠিনতম পরিবেশে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণের এক নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে।
এই অভিযানে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে দেশীয় প্রযুক্তির কার্যকারিতা যাচাইয়ের ওপর। এর মধ্যে রয়েছে বিশেষভাবে নির্মিত 'স্নো লিওপার্ড ৬৬' চাকাযুক্ত যান এবং শক্তিশালী 'THT550' টোয়িং সরঞ্জাম। এই সরঞ্জামগুলি বরফের দুর্গম পথে পরিবহণ ও ভারী কাজ সম্পাদনের জন্য বিশেষভাবে নকশা করা হয়েছে। এই পুরো কার্যক্রমের সহায়তায় রয়েছে চীনের দুটি মেরু গবেষণা বরফ-ভাঙা জাহাজ, 'শুয়েলং' এবং 'শুয়েলং ২'। অভিযানটি ২০২৬ সালের মে মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা, যা চীনের মেরু অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতাকে আরও সুদৃঢ় করবে।
এই বৈজ্ঞানিক দলের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধান বিজ্ঞানী ওয়েই ফুহাই, যিনি ঘোষণা করেছেন যে এই অভিযানে প্রথমবারের মতো অ্যান্টার্কটিকার গভীর বরফের নিচে থাকা হ্রদগুলিতে বৈজ্ঞানিক ড্রিলিং পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এই অনুসন্ধানের জন্য চীন নিজস্বভাবে তৈরি গরম জল এবং তাপ-গলানো ড্রিলিং ব্যবস্থা ব্যবহার করবে, যার মাধ্যমে তিন হাজার মিটারেরও বেশি পুরু বরফ ভেদ করে নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এই ধরনের গভীর বরফের নিচের হ্রদগুলি চরম পরিবেশের কারণে অনন্য বাস্তুতন্ত্র ধারণ করে এবং বরফের চাদরের ইতিহাস ও জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ করে।
এই অভিযান আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই দলে চীনের মূল ভূখণ্ডের ৮০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের ৫০০ জনেরও বেশি সদস্য রয়েছেন, পাশাপাশি থাইল্যান্ড, চিলি, পর্তুগাল এবং হংকং ও ম্যাকাও-এর মতো অঞ্চল থেকেও গবেষকরা অংশ নিচ্ছেন। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা বৈশ্বিক বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়াকে আরও গভীর করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। উপরন্তু, কুইনলিং স্টেশনে পূর্বে স্থাপিত বায়ু-সৌর-হাইড্রোজেন-সংরক্ষণ হাইব্রিড নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবস্থার কার্যকারিতা যাচাই করা হবে, যা বার্ষিক ১০০ টনেরও বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার হ্রাস করেছে। এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতি প্রমাণ করে যে প্রতিকূলতার মাঝেও স্থিতিশীলতা এবং স্বনির্ভরতা অর্জনের পথ সুগম।
এই অভিযানকে কেবল একটি বৈজ্ঞানিক উদ্যোগ হিসেবে না দেখে, মানবজাতির সম্মিলিত অনুসন্ধানের এক নতুন পর্যায় হিসেবে দেখা যেতে পারে। প্রতিটি নতুন প্রযুক্তিগত পরীক্ষা এবং প্রতিটি সংগৃহীত তথ্য মহাজাগতিক প্রেক্ষাপটে আমাদের নিজেদের অবস্থান এবং পৃথিবীর জটিল প্রক্রিয়াগুলি বোঝার জন্য এক একটি সুযোগ। প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করার এই প্রচেষ্টা আসলে ভেতরের সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তোলার এক প্রতিফলন, যা আমাদের সম্মিলিত অগ্রযাত্রাকে নিশ্চিত করে।
উৎসসমূহ
China News
China's 42nd Antarctic expedition team sets sail from Shanghai
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
