NASA এবং ISRO-এর যৌথ উদ্যোগে উৎক্ষেপিত NISAR (NASA-ISRO Synthetic Aperture Radar) স্যাটেলাইটটি পৃথিবীর গতিশীল ব্যবস্থা, বিশেষ করে অ্যান্টার্কটিকার বরফ চাদরের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ৩০শে জুলাই, ২০২৫ তারিখে ISRO-এর জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল (GSLV) রকেটের মাধ্যমে এই অত্যাধুনিক স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হয়। এই ডুয়াল-ফ্রিকোয়েন্সি রাডার ব্যবস্থাটি সেন্টিমিটারের ক্ষুদ্রতম পরিবর্তনও শনাক্ত করতে সক্ষম, যা অ্যান্টার্কটিকার বরফ চাদরের গতিবিধি এবং গলন প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণগুলি আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। স্যাটেলাইটটির সান-সিঙ্ক্রোনাস কক্ষপথ বিশেষভাবে মেরু অঞ্চলগুলির উপর সর্বাধিক নজর রাখার জন্য তৈরি করা হয়েছে, যা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনগুলি তুলনা করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ফলে প্রাপ্ত তথ্যগুলি সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে, যা অ্যান্টার্কটিকার সংকটজনক পরিবর্তন এবং পৃথিবীর উপর এর প্রভাব সম্পর্কে অভূতপূর্ব অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করবে।
অ্যান্টার্কটিকার বরফ চাদর, যা পৃথিবীর বৃহত্তম বরফের ভাণ্ডার, তার গলন বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে একটি প্রধান কারণ। গত তিন দশকে, বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠ প্রায় ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এই হার ত্বরান্বিত হচ্ছে। কিছু মডেল অনুযায়ী, ২১০০ সালের মধ্যে অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠ ২৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে, এবং উচ্চ নিঃসরণ পরিস্থিতিতে এই বৃদ্ধি ১৭০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। NISAR স্যাটেলাইটটি দুটি ভিন্ন রাডার ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে, যা মেঘ এবং বনভূমির আচ্ছাদন ভেদ করতে পারে। এর L-ব্যান্ড রাডার (২৪ সেন্টিমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্য) গভীর বনভূমি, মাটি এবং বরফের স্তর ভেদ করে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে, যা বনভূমি, ভূগর্ভস্থ জল এবং হিমবাহের গতিবিধি অধ্যয়নের জন্য আদর্শ। অন্যদিকে, S-ব্যান্ড রাডার (১০ সেন্টিমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্য) পৃষ্ঠের সূক্ষ্ম বিবরণ, যেমন ফসলের বৃদ্ধি বা ছোট ভূমিকম্পের গতিবিধি ধারণ করতে পারদর্শী। এই দ্বৈত-ফ্রিকোয়েন্সি ক্ষমতা NISAR-কে সমস্ত আবহাওয়ায় এবং দিনের যেকোনো সময় ডেটা সরবরাহ করতে সক্ষম করে। এই মিশনের মাধ্যমে সংগৃহীত ডেটা জলবায়ু পরিবর্তন মডেলিং, দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার উন্নতিতে সহায়ক হবে। এটি কেবল অ্যান্টার্কটিকার বরফ চাদরের গতিবিধিই নয়, হিমালয় এবং অন্যান্য মেরু অঞ্চলের হিমবাহের পরিবর্তনগুলিও পর্যবেক্ষণ করবে।