অ্যান্টার্কটিকার সামুদ্রিক আভা: ডায়াটম ও কোকোలిথোফোরের ভূমিকা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

সম্পাদনা করেছেন: Uliana S.

বিজ্ঞানীরা প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে অ্যান্টার্কটিকার হিমশীতল জলে এক রহস্যময় আভার উৎস নিয়ে গবেষণা করছিলেন। সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, এই আভার মূল কারণ হলো আণুবীক্ষণিক ডায়াটম এবং কোকোలిথোফোর নামক প্ল্যাঙ্কটন। স্যাটেলাইট চিত্রে এই অস্বাভাবিক উজ্জ্বল অঞ্চলগুলি পূর্বে শুধুমাত্র উত্তরে অবস্থিত 'গ্রেট ক্যালসাইট বেল্ট'-এর জন্য দায়ী বলে মনে করা হতো।

গবেষণা জাহাজ R/V রজার রেভেলের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা দক্ষিণ মেরুর ৬০তম সমান্তরাল অক্ষাংশে পৌঁছে জলের রঙ, প্রতিফলন ক্ষমতা এবং জৈবিক সম্প্রদায়ের উপর ব্যাপক পরিমাপ পরিচালনা করেন। এই অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, কাঁচের মতো সিলিকা খোলসযুক্ত ক্ষুদ্র ডায়াটমগুলি এই আলোকসজ্জার একটি প্রধান কারণ। এছাড়াও, বিজ্ঞানীরা কোকোలిথোফোরকেও এই শীতল জলে টিকে থাকতে দেখেছেন, যা পুষ্টি চক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

অ্যান্টার্কটিকা অঞ্চল পৃথিবীর একটি প্রধান কার্বন ভান্ডার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চলমান প্রভাবগুলির পরিপ্রেক্ষিতে এই আবিষ্কারগুলি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৯৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত যখন অ্যান্টার্কটিকার সমুদ্রের বরফ বৃদ্ধি পেয়েছিল, তখন ডায়াটমের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের পর থেকে সমুদ্রের বরফ হ্রাস পেতে শুরু করলে ডায়াটমের সংখ্যায় কিছুটা পুনরুদ্ধার দেখা যায়, এবং ক্রিপ্টোফাইট নামক সামুদ্রিক শৈবালের একটি সম্পর্কিত গোষ্ঠী দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। ডায়াটমগুলি, যা কার্বন শোষণকারী বড় প্ল্যাঙ্কটন, এই সময়কালে তীব্রভাবে হ্রাস পায়।

সমুদ্রের বরফ সরে যাওয়ার পর ২০১৭ সাল থেকে কিছু অঞ্চলে ডায়াটমের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে, যখন ক্রিপ্টোফাইট এবং হ্যাপ্টোফাইটের মতো ছোট প্ল্যাঙ্কটনগুলি বাড়তে থাকে। ছোট প্ল্যাঙ্কটনগুলি ডায়াটমের মতো কার্যকরভাবে কার্বন সঞ্চয় করতে পারে না। তাই ডায়াটমের সংখ্যা কমে গেলে সমুদ্রের কার্বন সঞ্চয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ডায়াটমের সংখ্যা হ্রাস পেলে জৈবিক কার্বন পাম্প দুর্বল হয়ে পড়বে, যার ফলে গভীর সমুদ্রে কম কার্বন ডাই অক্সাইড পরিবাহিত হবে।

এই পরিবর্তনগুলি ক্রিল-কেন্দ্রিক খাদ্য শৃঙ্খলকে ব্যাহত করতে পারে, যা তিমি, পেঙ্গুইন এবং সিলের মতো প্রাণীদের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। এছাড়াও, এটি বৈশ্বিক কার্বন সিঙ্ক হিসাবে দক্ষিণ মহাসাগরের ভূমিকাকে দুর্বল করে দিতে পারে। এই সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলি জলবায়ুর উপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং তাই এই সংবেদনশীল বাস্তুতন্ত্রের উপর আরও গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। এই আবিষ্কারগুলি মেরু অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র এবং কার্বন সঞ্চয় ও চক্রের উপর নতুন আলোকপাত করেছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলি আরও ভালোভাবে বুঝতে সহায়ক হবে।

উৎসসমূহ

  • Merkur.de

  • Nexta Expeditions

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।

অ্যান্টার্কটিকার সামুদ্রিক আভা: ডায়াটম ও ... | Gaya One