অক্টোবর ২০২৫-এ প্রকাশিত একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার ফলাফল অ্যান্টার্কটিকার পরিবেশ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই গবেষণায় রস সাগরের অগভীর জলে চল্লিশটিরও বেশি সক্রিয় মিথেন নির্গমনের স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এই অঞ্চলে গ্রিনহাউস গ্যাসের এত বড় ঘনত্ব পূর্বে কখনও নথিভুক্ত হয়নি, যা সমুদ্রের তলদেশ থেকে বিপুল পরিমাণে নির্গত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছেন যে এই নতুন উৎসগুলি “বিস্ময়কর গতিতে” আবির্ভূত হচ্ছে। এটি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রক্রিয়াটি বিজ্ঞানীরা আগে যা অনুমান করেছিলেন, তার চেয়েও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এই অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার জলবায়ু বিজ্ঞানীদের জন্য একটি গুরুতর সতর্কবার্তা।
মিথেন একটি অত্যন্ত শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস, যা জলবায়ু পরিবর্তনে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলে। বিশ বছরের সময়কালে এটি কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় ৮০ গুণ বেশি শক্তিশালী। এই গ্যাস এখন এমন স্থানগুলি ভেদ করে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করছে যেখানে পূর্ববর্তী অনুসন্ধানগুলিতে কোনো ধরনের কার্যকলাপের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গবেষকরা এই মৌলিক পরিবর্তনটি নিশ্চিত করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। তারা ৭৯০ ফুট গভীরতা পর্যন্ত অ্যাকোস্টিক পদ্ধতি এবং দূরনিয়ন্ত্রিত যান (ROV) প্রয়োগ করেছেন। এই অপ্রত্যাশিত এবং ব্যাপক মিথেন নিঃসরণ মডেলের পরিবর্তন আঞ্চলিক জলবায়ু মডেলগুলির দ্রুত এবং জরুরি পুনর্মূল্যায়ন দাবি করে। একই সাথে, এই নতুন সক্রিয় মেরু নির্গমনগুলির পরিবেশগত তাৎপর্য সঠিকভাবে নির্ধারণের জন্য অবিলম্বে পরবর্তী বৈজ্ঞানিক অভিযানের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরে।
রস সাগরের এই ঘটনাটি অ্যান্টার্কটিকার প্রেক্ষাপটে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং বৃহত্তর জলবায়ু পরিবর্তনের একটি অংশ। এর আগে, মাত্র কয়েক মাস আগে, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ, একটি স্প্যানিশ অভিযান অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপের কাছে আরও একটি বিশাল মিথেন নির্গমন আবিষ্কার করেছিল। সেই নির্গমনের মেঘটি দৈর্ঘ্যে ৭০০ মিটার এবং প্রস্থে ৭০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই ধরনের ঘটনাগুলি মহাদেশটির অভ্যন্তরে দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিবেশগত পরিস্থিতি নির্দেশ করে।
গবেষকদের বিশ্লেষণ অনুসারে, এই নির্গমনগুলি প্রায় ২০ হাজার বছর আগে পচনশীল জৈব পদার্থ থেকে গঠিত স্ফটিক হাইড্রাইড থেকে গ্যাস মুক্ত হওয়ার সাথে সম্পর্কিত। এই প্রক্রিয়াটি মূলত বরফের চাদর গলে যাওয়ার কারণে সৃষ্ট হিমবাহ-পরবর্তী মহাদেশীয় উত্থানের ফল। এই উত্থানের ফলে তলদেশের চাপ কমে যাওয়ায় হাইড্রাইডগুলি ভেঙে যাচ্ছে। অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপ অঞ্চলে মিথেন হাইড্রাইডগুলিতে প্রায় ২৪ গিগাটন কার্বন জমা আছে বলে অনুমান করা হয়, যা সমগ্র বিশ্বের মানবসৃষ্ট কার্বন নির্গমনের দুই বছরের সমান। এই বিশাল মজুদের মুক্তি বিশ্ব জলবায়ুর জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
যদিও আর্কটিক অঞ্চলে অনুরূপ ঘটনা আগে নথিভুক্ত হয়েছে এবং বিজ্ঞানীরা সেদিকে নজর রেখেছেন, অ্যান্টার্কটিকায় এই ধরনের ব্যাপক আবিষ্কার বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, অ্যান্টার্কটিকার সমুদ্রের বরফের নিচে মিথেনের সঞ্চয় বিশ্বের সামুদ্রিক মজুদের এক চতুর্থাংশ পর্যন্ত হতে পারে। এই পরিবর্তনগুলিকে গভীর অধ্যয়ন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার অনুঘটক হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া এখন সময়ের দাবি। গ্রহের দ্রুত পরিবর্তনশীল গতিশীলতার আলোকে দায়িত্বশীল কৌশলগত সমন্বয় এবং পরিবেশগত নীতি নির্ধারণের জন্য এই তথ্যগুলি অপরিহার্য।