প্রায় ১৪,০০০ বছর আগে দক্ষিণ মহাসাগরে ঘটে যাওয়া বিশাল শৈবাল প্রস্ফুটন বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন ডাই অক্সাইডের (CO2) মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিয়েছিল। আলফ্রেড ওয়েগনার ইনস্টিটিউট (AWI) দ্বারা পরিচালিত একটি নতুন গবেষণা, যা নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, এই তথ্য প্রকাশ করেছে। এই ঘটনাটি মূলত Phaeocystis গণের শৈবাল দ্বারা চালিত হয়েছিল এবং পৃথিবীর কার্বন চক্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
অ্যান্টার্কটিক কোল্ড রিভার্সাল (ACR) সময়কালে, দীর্ঘ শীতকালীন সমুদ্রের বরফ এবং শক্তিশালী বসন্তকালীন বরফ গলা সহ নির্দিষ্ট জলবায়ু পরিস্থিতি Phaeocystis-এর এই বিশাল প্রস্ফুটনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছিল। এই শৈবালগুলি বায়ুমণ্ডল থেকে বিপুল পরিমাণ CO2 শোষণ করে, যা গ্রিনহাউস গ্যাসের বৃদ্ধিকে ধীর করে দেয়। AWI-এর গবেষকরা সমুদ্রের তলদেশে হাজার হাজার বছর ধরে সংরক্ষিত প্রাচীন ডিএনএ (sedaDNA) বিশ্লেষণ করে এই সংযোগটি চিহ্নিত করেছেন।
এই আবিষ্কারটি বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। অ্যান্টার্কটিকার সমুদ্রের বরফ কমে যাওয়ার প্রবণতা এই ধরনের শৈবাল প্রস্ফুটনের পরিবেশকে পরিবর্তন করতে পারে, যা কার্বন সিকোয়েস্টেশন বা কার্বন শোষণের সমুদ্রের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। এই পরিবর্তন বিশ্ব জলবায়ুর উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে, যা মেরু অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের সূক্ষ্ম ভারসাম্যকে তুলে ধরে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে Phaeocystis antarctica, যা দক্ষিণ মহাসাগরে প্রস্ফুটিত হয়, কার্বন রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পূর্বে ধারণা করা হতো যে এই শৈবালগুলি জলের উপরিস্তরেই ভেঙে যায়, তবে নতুন প্রমাণ ইঙ্গিত দেয় যে তারা গভীর সমুদ্রে এবং তলদেশে কার্বন জমা করতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীন ডিএনএ (sedaDNA) বিশ্লেষণের মাধ্যমে, বিজ্ঞানীরা কেবল অতীতের সামুদ্রিক জীবনধারা সম্পর্কেই জানতে পারছেন না, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে এই জীবনধারাগুলি কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে তাও বুঝতে পারছেন। এই প্রযুক্তিটি লক্ষ লক্ষ বছর আগের সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উপর আলোকপাত করতে পারে, যা বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলি বোঝার জন্য অপরিহার্য। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে পৃথিবীর জলবায়ু এবং জীবজগতের মধ্যে একটি গভীর এবং জটিল সম্পর্ক বিদ্যমান, যেখানে একটি ছোট পরিবর্তনও বৃহত্তর প্রভাব ফেলতে পারে।