উত্তর আটলান্টিক ডান তিমির সংখ্যায় একটি ক্ষীণ ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে, যা সংরক্ষণ প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ আশার আলো দেখাচ্ছে। দ্য নর্থ আটলান্টিক রাইট হোয়েল কনসোর্টিয়ামের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে এই প্রজাতির মোট সংখ্যা ৩৮৪ টি বলে অনুমান করা হচ্ছে, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় আটটি বেশি। এই ইতিবাচক পরিবর্তনটি বিগত দশকে দেখা যাওয়া উদ্বেগজনক পতনের ধারার বিপরীতে স্থিতিশীলতার দিকে এক নতুন পথের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এই সাম্প্রতিক উন্নতি কঠোর সংরক্ষণমূলক পদক্ষেপের ফলস্বরূপ এসেছে, যার মধ্যে রয়েছে জাহাজ চলাচল এবং মাছ ধরার জালে জড়িয়ে যাওয়া সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরও কড়াকড়ি করা। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসন ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এই প্রজাতির ঝুঁকি কমাতে নতুন প্রযুক্তির সহায়তার জন্য ৮২ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছিল। এই ধরনের সম্মিলিত প্রচেষ্টা পরিবেশের সঙ্গে মানুষের মিথস্ক্রিয়ায় একটি ভারসাম্য আনার সুযোগ করে দেয়, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপই বৃহত্তর বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তবে, এই আশার বার্তার মধ্যেও, উত্তর আটলান্টিক ডান তিমি এখনও চরমভাবে বিপন্ন। প্রজননক্ষম স্ত্রী তিমির সংখ্যা ৭০-এর নিচে থাকাটা একটি গভীর উদ্বেগের বিষয়। কনসোর্টিয়ামের চেয়ারপার্সন হিদার পেটিস উল্লেখ করেছেন যে, তিমিরা তাদের নিজেদের অংশটুকু পালন করছে, এখন মানুষের পালা সতর্কতা অবলম্বন করা। বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২২ সালে এই জনসংখ্যা ৩৫৬ টিতে নেমে এসেছিল এবং ২০২০ সালে সর্বনিম্ন ৩৫৮ টিতে পৌঁছেছিল। এর বিপরীতে, ২০২৪ সালের অনুমানটি (৩৮৪ টি) একটি ২.১ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে, যা স্থিতিশীলতা অর্জনের পথে ধীরে ধীরে অগ্রগতি দেখাচ্ছে।
নিউ ইংল্যান্ড অ্যাকোয়ারিয়ামের সিনিয়র বিজ্ঞানী ফিলিপ হ্যামিল্টন মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, মানুষের কারণে সৃষ্ট আঘাত ও মৃত্যুহার কমানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে এই জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। ২০২৪ সালটিকে তিমিদের জন্য কঠিন বছর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, যেখানে পাঁচটি মৃত্যুর ঘটনা এবং ১৬টি জট পাকানোর ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল, যার মধ্যে দশটিতেই মাছ ধরার সরঞ্জাম তিমিদের সঙ্গে লেগে ছিল। এছাড়াও আটটি জাহাজ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। তবে, এই বছর (২০২৫) এখনও পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর ঘটনা নথিভুক্ত হয়নি এবং আঘাতের সংখ্যাও কম। এই তথ্যগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, যখন বাহ্যিক চাপ হ্রাস পায়, তখন প্রকৃতির নিজস্ব নিরাময় প্রক্রিয়া কার্যকর হওয়ার সুযোগ পায়। এই প্রজাতিটির পুনরুদ্ধার পথ দীর্ঘ হলেও, এই সামান্য বৃদ্ধি আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ববোধের প্রতিফলন ঘটায়।
তিমিরা তাদের খাদ্যের জন্য বর্তমানে সেন্ট লরেন্স উপসাগরের দিকে বেশি ঝুঁকছে, যা সমুদ্রের তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে তাদের অভিবাসন পথেও পরিবর্তন এনেছে। কনসোর্টিয়ামের চেয়ারপার্সন হিদার পেটিস জানিয়েছেন যে, এই সামান্য বৃদ্ধি এবং গত বছরের তুলনায় কম আঘাত ও মৃত্যুহার তাদের ভবিষ্যতের প্রতি সতর্ক আশাবাদ জাগিয়েছে।