অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে গুন্ডি নামের একটি অন্ধ ওয়ামব্যাট তার অসাধারণ অভিযোজন ক্ষমতা প্রদর্শন করে এক নতুন জীবন যাপন করছে। শৈশবেই দৃষ্টিশক্তি হারানো এই ছোট্ট প্রাণীটির দৃঢ়তা এক গভীর অনুপ্রেরণার উৎস। গুন্ডির মা মারা যাওয়ার পর তাকে উদ্ধার করা হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে জানা যায় যে রেটিনাল ডিজেনারেশনের কারণে সে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে।
বন্য পরিবেশে তার টিকে থাকার ঝুঁকি বিবেচনা করে, সেন্ট্রাল কোস্টের একটি কেন্দ্রে তাকে স্থায়ীভাবে যত্নে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওয়ামব্যাটরা স্বভাবতই নিশাচর এবং তাদের দৃষ্টিশক্তি তুলনামূলকভাবে দুর্বল; তারা মূলত ঘ্রাণশক্তি ও শ্রবণশক্তির ওপর নির্ভর করে পথ চলে এবং খাদ্য সংগ্রহ করে। গুন্ডির ক্ষেত্রে, এই স্বাভাবিক প্রবণতা আরও শক্তিশালী হয়েছে। অভয়ারণ্যের কর্মীরা তাকে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সহায়তা করছেন। সে তার চারপাশের জগৎ বোঝার জন্য নির্দেশিত পদচারণায় অংশ নেয়, যেখানে সে তার অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলিকে পুরোপুরি ব্যবহার করতে শিখছে।
গুন্ডির এই সংগ্রাম অস্ট্রেলিয়ার ওয়ামব্যাটদের বৃহত্তর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে। বিশেষত বেয়ার-নোজড ওয়ামব্যাটরা বাসস্থান হ্রাস এবং সড়ক দুর্ঘটনার মতো ঝুঁকির সম্মুখীন। কিছু ক্ষেত্রে, সারকোপটিক ম্যাঞ্জ নামক পরজীবী সংক্রমণ তাদের বধির ও অন্ধ করে দিতে পারে, যা তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। গুন্ডির মতো প্রাণীদের জন্য, মানুষের যত্ন এবং সুরক্ষিত পরিবেশ অপরিহার্য, কারণ তারা প্রকৃতির কঠোর পরীক্ষায় টিকে থাকতে পারে না।
সেন্ট্রাল কোস্টের এই কেন্দ্রটি, যা ওয়াকআউট ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির মতো প্রতিষ্ঠান, উদ্ধার করা, বিপন্ন অথবা বন্য পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়া অসম্ভব এমন প্রাণীদের জন্য স্থায়ী আশ্রয়স্থল প্রদান করে। গুন্ডির যত্ন কেবল তার বেঁচে থাকাই নিশ্চিত করেনি, বরং তাকে একটি আনন্দময় জীবনও দিয়েছে। দর্শনার্থীরা তার অনন্য মিথস্ক্রিয়া এবং স্থিতিস্থাপকতা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন এবং উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। গুন্ডি তার ছোট ঘেরের মধ্যে নাক দিয়ে বল ঠেলে খেলার মাধ্যমে তার প্রাণবন্ততা বজায় রেখেছে।
এই ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয় যে সবচেয়ে দুর্বল প্রাণীরাও কীভাবে অভ্যন্তরীণ শক্তির মাধ্যমে নিজেদের জন্য একটি নতুন পথ তৈরি করতে পারে। গুন্ডির মতো প্রাণীদের সুরক্ষা কেবল তাদের জন্যই নয়, বরং তাদের আবাসস্থল রক্ষার গুরুত্বকেও তুলে ধরে। এই অভয়ারণ্যগুলি মানবজাতির মধ্যে সহানুভূতি ও দায়িত্ববোধের এক শক্তিশালী প্রতিফলন ঘটায়, যেখানে প্রতিটি জীবের টিকে থাকা সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর নির্ভরশীল।
