সিডনি হারবারের জলজ বাস্তুতন্ত্রের উন্নতি এবং ঝিনুকের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস (UNSW) সিডনির গবেষকরা 'বায়োশেল্টার্স' নামে পরিচিত উদ্ভাবনী 3D-প্রিন্টেড কাঠামো তৈরি করেছেন। এই কাঠামো গুলি শহুরে উন্নয়নের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাকৃতিক আবাসস্থলের অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে এবং হারবারের প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতিপূরণ ও হারিয়ে যাওয়া ঝিনুকের বাসস্থান পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কাজ করছে।
বায়োশেল্টার্সগুলি পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ছাঁচে তৈরি করা হয় এবং ঝিনুকের গুঁড়ো মেশানো কংক্রিট দিয়ে পূর্ণ করা হয়। এই নকশা ঝিনুকের বংশবৃদ্ধি এবং তাদের বিকাশের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে, যা সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উন্নতিতে সহায়ক। ঝিনুকগুলি দৈনিক প্রায় ১০০ লিটার পর্যন্ত জল পরিস্রুত করতে পারে এবং অন্যান্য সামুদ্রিক জীবের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থলও সরবরাহ করে। কংক্রিট মিশ্রণে ঝিনুকের খোসা অন্তর্ভুক্ত করার ফলে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীরগুলির পুনর্জন্ম সহজ হয়।
এই প্রকল্পটি নিউ সাউথ ওয়েলসে ঝিনুকের প্রাচীর পুনঃস্থাপনের বৃহত্তর প্রচেষ্টার একটি অংশ। অস্ট্রেলিয়ান সরকার সিডনি নদীর জর্জস রিভার মোহনায় অস্ট্রেলিয়ান ফ্ল্যাট অয়েস্টার ফিরিয়ে আনার জন্য উল্লেখযোগ্য তহবিল সরবরাহ করেছে। ২০২০ সালে একটি পরীক্ষামূলক বায়োশেল্টার স্থাপন করা হয়েছিল, যা ঝিনুক, শৈবাল, কেল্প এবং ছোট মাছের আবাসস্থল হয়ে উঠেছে। এই সাফল্য নতুন স্থায়ী স্থাপনার জন্য নতুন কমিশন পেয়েছে, যার মধ্যে নতুন সিডনি ফিশ মার্কেট সাইটও রয়েছে।
ভবিষ্যতে, সরাসরি কংক্রিট প্রয়োগের জন্য প্রিন্টিং প্রক্রিয়া উন্নত করার এবং বিভিন্ন সি-ওয়াল কনফিগারেশনের জন্য মডুলার ডিজাইন মানিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এই অগ্রগতিগুলি সিডনি হারবার জুড়ে পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা সম্প্রসারিত করার লক্ষ্য রাখে। সিডনি ইনস্টিটিউট অফ মেরিন সায়েন্সের মতো প্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতায় বায়োশেল্টার্স প্রকল্পটি পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এবং সামুদ্রিক দৃশ্যপট পুনরুদ্ধারে উন্নত প্রযুক্তি এবং সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানের সমন্বয়কে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে ঝিনুকের প্রাচীরগুলি কেবল জল পরিষ্কার করতেই সাহায্য করে না, বরং মাছ, শৈবাল এবং কেল্পের মতো অন্যান্য সামুদ্রিক জীবের জন্যও খাদ্য ও আবাসস্থল সরবরাহ করে। এই কাঠামো গুলি প্রায় ছয় মিটার লম্বা, দুই মিটার চওড়া এবং ৯০ সেন্টিমিটার উঁচু, যা ২৫টি প্যানেলে বিভক্ত। এই প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী বন্দরগুলির জন্য অভিযোজিত হতে পারে এবং এমনকি স্থলজ প্রাণীদের জন্য কৃত্রিম আবাসস্থল তৈরিতেও প্রসারিত হতে পারে। এই উদ্যোগটি শহুরে উন্নয়নের ফলে হারিয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক আবাসস্থল পুনরুদ্ধারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।