সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানগুলি নিশ্চিত করেছে যে কিছু পোষা কুকুরের মধ্যে আচরণের এমন কিছু ধরন দেখা যায় যা মানুষের আসক্তির সাথে আশ্চর্যজনকভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ, বিশেষত তাদের প্রিয় খেলনার ক্ষেত্রে। এই ঘটনাটি, যা পূর্বে বিচ্ছিন্নভাবে অধ্যয়ন করা হয়েছিল, এখন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পেয়েছে, যা আমাদের এই চারপেয়ে সঙ্গীদের অভ্যন্তরীণ জগত বোঝার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
এই দিকটি গভীরভাবে বিশ্লেষণের জন্য ইউনিভার্সিটি অফ ভেটেরিনারি মেডিসিন ভিয়েনা এবং বার্ন বিশ্ববিদ্যালয়-এর বিশেষজ্ঞরা একটি গবেষণা দল গঠন করেন। আলিয়া মাদজিনি-এর নেতৃত্বে এবং নিউরোবায়োলজিস্ট স্টেফানি রিমার-এর অংশগ্রহণে পরিচালিত এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় বিভিন্ন জাতের ১০৫টি কুকুরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পোষা প্রাণীগুলির প্রতিক্রিয়াগুলি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। ফলাফলগুলি প্রকাশ করে যে অংশগ্রহণকারীদের এক-তৃতীয়াংশ—অর্থাৎ ১০৫টির মধ্যে ৩৩টি কুকুরের মধ্যে আসক্তিমূলক আচরণের সাথে সম্পর্কিত লক্ষণগুলি শনাক্ত করা হয়েছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে এই সমস্যাটি সম্ভবত প্রত্যাশার চেয়েও বেশি প্রচলিত।
পরীক্ষাগুলির সময়, যার মধ্যে খেলনা নিয়ে খেলা, কুকুরের নিজস্বভাবে খেলনার সাথে মিথস্ক্রিয়া এবং পরে খেলনাটি লুকিয়ে ফেলা অন্তর্ভুক্ত ছিল, কিছু প্রাণীর মধ্যে অতিরিক্ত আকাঙ্ক্ষা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাব লক্ষ্য করা যায়। এই কুকুরগুলি উচ্চ মাত্রার হতাশা প্রদর্শন করে; যেমন—তারা কান্নাকাটি করে, অধরা বস্তুর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, অথবা এমনকি খেলনাটি পাওয়ার জন্য বাধা অতিক্রম করার চেষ্টা করে। আশ্চর্যজনকভাবে, তারা এই সময় খাবার বা অন্যান্য প্রলোভনগুলিকেও উপেক্ষা করে। বিজ্ঞানীরা মানুষের মধ্যে জুয়া খেলার মতো প্যাথলজিকাল অবস্থার সাথে কুকুরের এই অতিরিক্ত আকর্ষণকে তুলনা করেছেন।
গবেষণাটি আরও ইঙ্গিত দেয় যে এই ধরনের আচরণের প্রবণতার একটি সম্ভাব্য বংশগত ভিত্তি থাকতে পারে, যা সবসময় লালন-পালনের পদ্ধতির উপর নির্ভর করে না। জন্মগতভাবে আবেগ প্রকাশের তীব্র প্রবণতা এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা রয়েছে এমন জাতগুলি, বিশেষত টেরিয়ার এবং শেফার্ড-জাতীয় কুকুর, এই ধরনের আসক্তিমূলক আচরণের উচ্চতর ফ্রিকোয়েন্সি প্রদর্শন করেছে। একই সাথে, খেলনার প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ বা আচ্ছন্নতা কুকুরের মধ্যে স্ট্রেস-জনিত কারণে বা দৃশ্যমান কোনো কারণ ছাড়াই সৃষ্ট এক ধরনের অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার (OCD)-এর রূপ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মালিকদের পরামর্শ দেন যে অতিরিক্ত আসক্তির লক্ষণ দেখলে কেবল খেলনাটি কেড়ে না নিয়ে বরং পোষা প্রাণীর শক্তিকে সক্রিয়ভাবে অন্য দিকে চালিত করা উচিত। তারা প্রাণীর দৈনন্দিন জীবনকে সমৃদ্ধ করার সুপারিশ করেন, যেমন—অনুসন্ধানমূলক কাজ বা রশি টানাটানির মতো আরও বেশি যৌথ কার্যকলাপের প্রবর্তন করা। এছাড়াও, শান্তভাবে পুনরুদ্ধার বা বিশ্রাম নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই ধরনের পদ্ধতি বাধ্যতামূলক আসক্তি থেকে মনোযোগ সরিয়ে আরও সুরেলা মিথস্ক্রিয়ার দিকে মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে, যা মানুষ এবং প্রাণীর মধ্যে সম্পর্ককে আরও মজবুত করে তোলে।