আমিরাতসে দয়া: যেভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাসিন্দারা প্রাণীদের রক্ষা ও জীবনে একীভূত করছে

সম্পাদনা করেছেন: Olga Samsonova

সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) বাসিন্দারা এখন ক্রমবর্ধমান হারে দয়ার কাজ করছেন। তারা অসহায় প্রাণীদের নিজেদের বাড়িতে আশ্রয় দিচ্ছেন এবং তাদের সাথে দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন তৈরি করছেন। এই ক্রমবর্ধমান প্রবণতা সমাজের মধ্যে প্রতিটি জীবের মূল্য সম্পর্কে গভীর পরিবর্তনের প্রতিফলন ঘটায়। এই ধরনের সহানুভূতির উদাহরণ অসংখ্য এবং হৃদয়স্পর্শী।

দুবাইয়ে, টিফানি ডিকিনসন 'সাপোজক' নামের একটি কবুতরকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, যা গুরুতর নিউরোলজিক্যাল ভাইরাল রোগ থেকে সেরে উঠছিল। বর্তমানে, পাখিটি শুধু বেঁচে নেই, বরং তার অ্যাপার্টমেন্টে সতেজভাবে বেড়ে উঠছে এবং তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যাকাউন্টও রয়েছে। একইভাবে, শিরিন জেম্মো পরিত্যক্ত দুটি নবজাতক বিড়ালছানাকে বোতলে দুধ খাইয়ে বাঁচিয়ে তুলেছিলেন। এখন তারা তাদের উদ্ধারকারীর প্রতি গভীর আসক্তি প্রদর্শন করে। দুবাইয়ের বাসিন্দা নাতাশা ডি'সুজা গত এক দশক ধরে প্রাণী উদ্ধারের কাজে যুক্ত আছেন। তিনি বেশ কয়েকটি বিড়ালকে আশ্রয় দিয়েছেন, যাদের মধ্যে কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে পরিত্যক্ত হওয়া বিড়ালও ছিল, যদিও ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে ছড়ানোর কোনো প্রমাণ ছিল না।

এই ব্যক্তিগত কাহিনিগুলো স্পষ্ট প্রমাণ করে যে প্রাণী উদ্ধারের প্রচেষ্টা কীভাবে মানুষ এবং পোষা প্রাণীর মধ্যে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক তৈরি করে। এই সমর্থন আন্দোলনকে সক্রিয়ভাবে জোরদার করছে "Animals and Us" এবং "RAK Animal Welfare Centre"-এর মতো সংস্থাগুলো, যারা নিয়মিতভাবে দত্তক গ্রহণকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উদাহরণস্বরূপ, রাস আল খাইমা অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার সেন্টার (RAK AWC) ২০১০ সাল থেকে গৃহহীন ও আহত প্রাণীদের উদ্ধার, পুনর্বাসন এবং নতুন বাড়িতে স্থানান্তরের কাজ করে আসছে।

তবে, প্রাণী অধিকার কর্মীরা গ্রীষ্মের মাসগুলোতে পরিত্যক্ত প্রাণীর সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করেছেন। এর প্রধান কারণ প্রায়শই ছুটি বা অবকাশ। শিশুরা খরগোশ, পাখি বা কচ্ছপের সাথে খেলা করার পরে সেগুলোকে পার্কে ফেলে রেখে যায়, এই পরিকল্পনা নিয়ে যে ফিরে এসে নতুন পোষা প্রাণী কিনবে। তীব্র গরমে কুকুর ও বিড়ালকে বারান্দায় ফেলে রাখার ঘটনাও বেড়েছে, যা পানিশূন্যতা এবং স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি করে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে আবুধাবি ডিপার্টমেন্ট অফ মিউনিসিপ্যালিটিস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট (DMT), শিক্ষামূলক প্রচার চালাচ্ছে। তারা দায়িত্বশীল মালিকানার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে এবং পোষা প্রাণীকে পরিত্যাগ করার পরিণাম সম্পর্কে মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।

ব্যক্তিগত দয়ার কাজ ছাড়াও, সংযুক্ত আরব আমিরাতে পরিষেবা খাতে প্রাণীদের সম্ভাবনাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, দেশের বিমানবন্দরগুলোতে ৩৮টি প্রশিক্ষিত কুকুর কাজ করছে, যা দুবাইয়ে পরিচালিত গবেষণা অনুসারে ৯৮.২% পর্যন্ত নির্ভুলতার সাথে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে সক্ষম। উদ্ধারকারী সম্প্রদায় তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ব্যবহার করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, প্রায়শই অস্থায়ী পালক যত্নের সাহায্য নেয়। এমন পরিস্থিতিতে যখন কোনো প্রাণী স্থানীয়ভাবে বাড়ি খুঁজে পায় না, তখন আন্তর্জাতিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। যেমন, মালিক হারানো বিড়াল 'এমা'কে সফলভাবে যুক্তরাজ্যে (UK) স্থানান্তরিত করা হয়েছিল, যেখানে স্থানান্তরের খরচ সংস্থা এবং নতুন মালিকের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া হয়। এই দৃষ্টান্তগুলো প্রমাণ করে যে দুর্বলদের প্রতি যত্নশীল হওয়া মানবজাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে, যা সম্প্রদায়ের অভ্যন্তরে এবং বাইরে সম্পর্ককে শক্তিশালী করে।

উৎসসমূহ

  • Khaleej times

  • Khaleej Times

  • The National

  • UAE Times

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।